শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বয়স ১২৭, এখনো হেঁটে যান মসজিদে

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বয়স ১২৭, এখনো হেঁটে যান মসজিদে

মোখলেছুর রহমান। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দাবি করেন, তাঁর বয়স ১২৭ বছর। ১৩১৮ বাংলা সালে তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। গ্রামে তাঁর সমসাময়িক কেউ বেঁচে নেই। তাঁর বন্ধু-সহপাঠীরা মারা গেছেন ৪৫/৫০ বছর আগে। দিনমজুর ও রিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা মোখলেছুর রহমানের লেখাপড়া নেই। এখনো তিনি হেঁটে মসজিদে যান। বাড়ির পাশে দোকানে গিয়ে চায়ের কাপে পাউরুটি চুবিয়ে মুখে নেন। তবে চোখের আলো কমেছে। সব কিছু ঘোলাটে দেখেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাচার মতো ঘর। সেখানে তিনি একা থাকেন। পাশের বেড়াগুলো ভাঙা। পৌষের হিমেল বাতাসের সেখানে অবাধ আসা-যাওয়া। তাঁর স্মৃতিশক্তি প্রখর। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নানা ঘটনাপ্রবাহ তার মুখস্থ। তিন শতকের ইতিহাস ধারণ করেছে তাঁর শরীরের ভাঁজপড়া মোটা চামড়া। বাল্যশিক্ষা বইয়ে দেখেছেন রানির ছবি। মাথায় মুকুট। ব্রিটিশের রানি হয়েছে ওটা তো সেদিনের কথা। তিনি সম্ভবত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের (১৯৫২-২০২২) কথা বলেছেন। মোখলেছুর রহমান জানান, কাজ করেছি। খেয়েছি। ছেলে-মেয়েকে খাইয়েছি। টাকা জমিয়ে জমি কিনেনি। এখন খেতে পারি না। এক সময় আধা কেজি থেকে পৌনে এক কেজি চালের ভাত খেয়েছি। আমার থেকে বেশি বয়সের মানুষ আশপাশের ২০ গ্রামেও নেই। তাঁর বাবা আকর উদ্দিন ৭৫ বছর ও মা জোবেদা খাতুন ১৫০ বছর বয়সে মারা যান। কয়েক বছর আগে তাঁর স্ত্রী রহিমা খাতুন ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিন ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। যারা আছেন তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তাই তাঁর প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও কাপড় মেলে না। তাঁর একটি বয়স্কভাতার কার্ড আছে। তিনি তিন মাসে ১৫০০ টাকা পান। আরও কিছু সহযেগিতা পেলে তাঁর সুবিধা হবে।

তিনি বলেন, দেশে এক সময় খুব অভাব ছিল। গ্রামের রাস্তাঘাট ছিল না। টিভি রেডিও ছিল না। বর্ষায় গ্রাম থেকে নৌকা ছাড়া বের হওয়া যেত না। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে সন্ধ্যায় পুঁথি পাঠ ও জারি গানের আসর বসত। সারা দিন কাজ করে এক আনা পেতেন। তখন চাল সোয়া সের ছিল তিন আনা। গ্রামে আর্থিক অবস্থা ভালো শুধু হাজিবাড়ির ও মোল্লাবাড়ির লোকজনের। লেখাপড়া ছিল হাজি আবদুল জব্বার ও মোল্লা মনিরুদ্দিন মুন্সীর। দেশে মানুষের দিনবদল হয়েছে ইরি (বোরো) ধান আসার পর। ক্ষুধার কষ্ট কমেছে।

৮০ বছরের ঈমান আলী মোল্লা বলেন, মোখলেছ ভাই আমাদের অনেক বড়। তাঁকে আমরা ছোটবেলায়ও এমন দেখেছি। তিনি শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। প্রচুর খেতে পারতেন। তাঁর মতো বেশি বয়সী মানুষ ১০ গ্রামেও নেই।

গ্রামের বাসিন্দা উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মাসুদুল হক বলেন, মোখলেছুর রহমান ভালো মনের মানুষ। আর্থিক সহযোগিতা পেলে তিনি আরও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ১০০ বছর বা ১২৭ বছর বয়স মাপার প্যারামিটার আমাদের নেই। আমরা হয়তো ৫০-ঊর্ধ্ব বয়স নির্ণয় করতে পারি। ১০০ এর বেশি বয়স নির্ধারণের বিষয়টি ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর