শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কিলিমানজারো পর্বতচূড়ায় বাংলাদেশি দম্পতি

লক্ষ্য এবার সেভেন সামিট জয়

রাশেদুর রহমান

কিলিমানজারো পর্বতচূড়ায় বাংলাদেশি দম্পতি

করোনাভাইরাসের সময়টাতে কেনিয়ার রাজধানী মোম্বাসায় বসবাস করছিলেন বাংলাদেশি দম্পতি শহিদুল আলম ও জুলিয়া পারভীন। ২০১৩ সাল থেকেই তারা আফ্রিকার এই দেশে। করোনার সময়টাতে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে অন্যদের মতো তাদেরও বিরক্তি চলে এসেছিল। মন ভালো করতে পুরনো ছবি দেখতেন তারা। একসময় পাহাড় ভ্রমণের ছবি চোখে পড়ে। হঠাৎ করেই মনে হলো- পাহাড় এত সুন্দর! এত রহস্যময়! পাহাড়ের আরও কাছে যেতে শুরু করেন তারা। ঘন বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। রাত-দিনে ক্যাম্পিং করেন জঙ্গলে। সেসব পাহাড় আর জঙ্গলে থাকত চিতা, পাইথন, সিংহের ভয়। কিন্তু ভয়কে জয় করে ঘুরতে শুরু করলেন তারা। প্রকৃতির চাদরে নিজেদের হারিয়ে দারুণ এক অনুভূতি হলো তাদের। পাহাড় জয়ের নেশা ধরে গেল। একসময় শহিদুল আলম কথার কথায় বলে ওঠেন, এসব ছোটখাটো পাহাড়ে আর চড়ে কাজ নেই। চলো আফ্রিকার পর্বত চূড়া কিলিমানজারো। অমনি লাফিয়ে ওঠেন জুলিয়া পারভীন। বলে ওঠেন, চলো তাহলে।

যেই ভাবা, সেই কাজ। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। দীর্ঘ সময় হাঁটার অভ্যাস করতে থাকেন। পাশাপাশি চলে ফিটনেস বাড়ানোর কাজ। হাইকিংয়ের নতুন নতুন কলাকৌশল রপ্ত করেন তারা। দীর্ঘ আট মাসের প্রশিক্ষণ শেষ করে নিজেদের প্রস্তুত করেন আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের জন্য।

কেনিয়ার সীমান্তের খুব কাছে তানজানিয়ায় অবস্থিত কিলিমানজারো পর্বত চূড়া। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৫ হাজার ৮৯৫ মিটার। পৃথিবীর চতুর্থ এবং আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এটি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন শহিদুল আলম ও জুলিয়া পারভীন। জুলিয়া বলেন, ‘আমরা কিলিমানজারো পর্বতশৃঙ্গ জয়ের পথে নানা রকমের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। লাল-সবুজের পতাকা আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় নিয়ে যেতে ভয়ংকর কষ্টকর এক পথ অতিক্রম করতে হয়েছে আমাদের। অভিযানের প্রথম দুই দিন বৃষ্টি আর আলো-আঁধারির মধ্য দিয়ে পথ চলেছি। সেখানে ছিল প্রচ- ঠান্ডা। ছিল কুয়াশার চাদর আর বৃষ্টি। হাইকিং করা ছিল দুঃসাধ্য।

তবে আমরা পিছু হটিনি। কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছে তবেই থেমেছি।’ কিলিমানজারো পর্বতচূড়া জয় করেই থেমে থাকতে রাজি নন এই দম্পতি। সাত মহাদেশের শীর্ষ সাতটি পর্বতচূড়া জয় করতে চান তারা। জুলিয়া বলেন, ‘আমরা আগামী জুনে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া মাউন্ট এলব্রুজ অভিযানে যাব। এই পর্বতচূড়ায় যাওয়ার বিপজ্জনক পথ হলো নর্দার্ন রুট। এই পথটাই বেছে নেব আমরা।’ মাউন্ট এলব্রুজ জর্জিয়া সীমান্তে অবস্থিত রাশিয়ার কাবারডিনো-বলকারিয়া এলাকায়। রাশিয়ার ভিসা নিয়েই যেতে হবে সেখানে। ককেশাসীয় পর্বতমালার ভয়ংকর এক চূড়া এটি। এখানে পদে পদে লুকিয়ে থাকে প্রকৃতির নানা ফাঁদ। ৫ হাজার ৬৪২ মিটার উচ্চতার এই চূড়া জয়ের পথে আছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে জুলিয়া-শহিদুল দম্পতি সব ধরনের বিপদকে জয় করেই পৌঁছতে চান ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায়। একে একে তারা শেষ করবেন সেভেন সামিট। দুঃসাহসিক এই অভিযানের নাম দিয়েছেন তারা ‘ইউ অ্যান্ড মি, স্টেপস টু সেভেন দ্য সামিট’। সেভেন সামিটের মধ্যে কিলিমানজারো ও মাউন্ট এলব্রুজ ছাড়াও আছে এশিয়ার মাউন্ট এভারেস্ট (৮ হাজার ৮৪৮ মিটার), দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকোনকাগুয়া (৬ হাজার ৯৬১ মিটার), উত্তর আমেরিকার ডেনালি (৬ হাজার ১৯৪ মিটার), ওশেনিয়ার পুঞ্জক জায়া (৪ হাজার ৮৮৪ মিটার) এবং অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন (৪ হাজার ৮৯২ মিটার)। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের মিশনে নামবেন জুলিয়া-শহিদুল। এর আগে অন্য সামিটগুলোও শেষ করতে চান তারা। জুলিয়া বলেন, ‘আমরা সামনের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকোনকাগুয়া পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে চাই। এরপর ধীরে ধীরে বাকিগুলোও শেষ করব।’

সর্বশেষ খবর