সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী

৩০০ জাতের ধান ও রঙিন ভুট্টার উদ্ভাবক

শেখ মেহেদী হাসান

৩০০ জাতের ধান ও রঙিন ভুট্টার উদ্ভাবক

জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী কাজ করছেন ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে পড়াশোনা শেষে সেখানেই শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তিন বছর শিক্ষকতার পর অস্ট্রেলিয়া সরকারের আমন্ত্রণে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় গবেষণা সংস্থায়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এ পর্যন্ত ৩০০ রকমের নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন তিনি। তাঁর প্রজেক্ট রয়েছে স্পেন, মরিশাস, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদন ও ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা করছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি উদ্ভাবন করেছেন ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা। তার এ উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে।

বিশ্বখ্যাত জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর জন্ম মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে উচ্চতর পড়াশোনার সময় তিনি ‘রেকডি’ নামক তিনটি অযৌন জিন উদ্ভাবন করেন। এর ফলে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভবপর হয়। এমআইটি, আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট হেলথ এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রে গবেষণা ও শিক্ষকতার সময় তিনি একাধিক নতুন ধানের জিন উদ্ভাবন করেন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় তার গবেষণা ও উদ্ভাবন আরও বিস্তৃৃত হয়। চীনে ইয়ং লং পিং প্রথমবারের মতো হাইব্রিড জাতের ধান উৎপাদন করেন। তিনি মাঠের মধ্যে একটি ধান খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটি কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে সেখানে ছিল। ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিশ্ব¦াস, হাইব্রিডের যে শক্তি তা প্রকৃৃতির মধ্যেই আছে। কাজেই এটা যে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সৃষ্টি তা আমি মানতে রাজি নই। প্রকৃৃতির মাধ্যমেই একটি শস্য আরেকটি শস্যের সঙ্গে মিশে হাইব্রিড হয় এবং নতুন জাত উদ্ভব হয়। আমরা এখন গবেষণার মাধ্যমে হাইব্রিডকে একটা উৎপাদনের পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এর মাধ্যমে নতুন জাতের ধান উৎপাদন এবং বিশাল পরিমাণে ধান উৎপাদন করা সম্ভব। দেখুন জীববৈচিত্র্য আছে বলে আমরা একটি ধানের সঙ্গে আরেকটি ধানের হাইব্রিড ঘটাতে পারছি। জীববৈচিত্র্য যদি না থাকত তাহলে হাইব্রিডের মাধ্যমে উৎপাদন সম্ভব হতো না। এই যে আমাদের দেশের হাজার জাতের ধান, যার উৎপাদন কমে যাচ্ছে, আমার তো মনে হয় একটি হাইব্রিড মডেল বানিয়ে এর উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারি।’ স্পেন, চীন, মরিশাস, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের সিলেটে আবেদ চৌধুরীর প্রজেক্ট রয়েছে। এখানে নতুন প্রজাতির ধান উৎপাদন করা হচ্ছে।

ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত সোনালি মিনিকেট চাল একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। যা খেলে রক্তে শর্করা এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাঁর উদ্ভাবিত কোনো কোনো ধান তিনবার ফসল দেয়। তিনি সম্প্রতি লাল রঙের চাল ও রঙিন ভুট্টা উদ্ভাবন করেছেন। এর পুষ্টিগুণ বেশি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মানুষের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার দিন দিন বাড়ছে। এসব রোগের অন্যতম কারণ খাদ্যাভ্যাস। আমাদের চাল খেলে কার্বোহাইড্রেড এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।’ এর বাজারমূল্য অন্যান্য চালের মতো। সম্প্রতি উদ্ভাবিত ‘রঙিন ভুট্টা’ সম্পর্কে ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার উদ্ভাবনের মধ্যে লাল-সবুজের পতাকা অর্থাৎ বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেছিলাম। রঙিন ভুট্টা উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিখেত রঙিন করে দিতে চাই। তাছাড়া ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান খুবই বেশি। শিশুদের মাঝে এ ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া শিশুরা এ ভুট্টা খেলে তাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পূরণ হবে। রঙিন ভুট্টা বছরে চারবার চাষ করা যায়। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিএডিসির মাধ্যমে ধান ও ভুট্টার বীজ সরবরাহ করছি। মানুষ বাড়ির আশপাশে এবং পতিত জায়গায় ভুট্টা চাষ করলে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারবে। আমরা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু কালো টমেটোও উদ্ভাবন করেছি। আমার লক্ষ্য ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

সর্বশেষ খবর