রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেউ কারও চেয়ে কম নন

দেশসেরা গোলরক্ষকদের দ্বৈরথ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কেউ কারও চেয়ে কম নন

আশরাফুল ইসলাম রানা, আনিসুর রহমান জিকো

রাশিয়ার বিখ্যাত গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিনকে কে না চিনে। বিশ্বকাপে তিনি দর্শকদের মন জয় করে ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষকের খেতাব পেয়ে যান। সেই লেভ ইয়াসিনের সঙ্গে তুলনা করা হতো বাংলাদেশের শহিদুর রহমান সান্টুকে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সান্টু নামটি অপরিচিত থাকতে পারে। কিন্তু এই সান্টু শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়ার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ছিলেন। ঢাকার দর্শকরা তার নৈপুণ্য দেখে লেভ ইয়াসিনের সঙ্গে তুলনা করতেন। ওই সময়ে বলা হতো যে দলে সান্টু আছে সে দলে ডিফেন্ডারের প্রয়োজন নেই। তার হাতে যেন জাদু ছিল। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা যত গতিময় শট নিতেন না কেন, সান্টু তা আস্থার সঙ্গে রুখে দিতেন। সান্টুর সময় মোত্তালেবও গোলরক্ষক পজিশনে দৃঢ়তার পরিচয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ননী, হাকিম, সুহাস, মইন, পিন্টু ও আতিক দর্শকদের নজর কেড়েছেন। কিন্তু সান্টুর তুলনা সান্টুই। আশি থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত মহসিন ও কানন ছিলেন দেশের সেরা গোলরক্ষক। এমন অবস্থা দাঁড়াতো জাতীয় দলে কাকে সেরা একাদশে খেলবেন এ নিয়ে হিমশিম খেতেন কোচ। সত্যি বলতে কি তখন গোলরক্ষক নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। দুজনা অবসর নেওয়ায় গোলরক্ষক পজিশনে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আমিনুল ও বিপ্লব দৃঢ়তার পরিচয় দিলে সঙ্কট কিছুটা হলেও কেটে যায়। গত কয়েক বছর ধরে গোলরক্ষক পজিশনে ভয়াবহ অবস্থা। আস্থা রাখা যায় এমন গোলরক্ষকের দেখা মিলছিল না। ফুটবলে বাংলাদেশের বিপর্যয়ে পেছনে যোগ্য গোলরক্ষকের অভাবটাই ফুটে উঠছিল। যার প্রমাণ ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। বাংলাদেশের যেখানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে খেলার কথা সেখানে কি না গোলরক্ষকের ব্যর্থতায় শেষ ম্যাচ হেরে বিদায়। আশার কথা ফুটবলে সেই সঙ্কটটা কাটতে শুরু করেছে। দুই গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ও আনিসুর রহমান জিকো দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে সান্টু না হোক মহসিন ও কাননের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এদের নিয়েও কোচকে মধুর সমস্যায় পড়তে হবে। কাকে খেলাবেন সেরা একাদশে। নৈপুণ্য বা পারফরম্যান্সের বিচারে কেউ কারোর চেয়ে কম নয়। ভালোমানের গোলরক্ষক নেই সেই আফসোসের দিনটা বোধ হয় কাটতে শুরু করেছে। শেষ হওয়া ফুটবল মৌসুমে রানা ও জিকোর পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। মুন্সিগঞ্জের ছেলে ৩১ বছর বয়স্ক রানা খেলেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। লিগে তার দল তৃতীয় হলেও তার হাতে উঠেছে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। আর কক্সবাজারের ছেলে ২২ বছরে তরুণ ইতিহাস গড়া বসুন্ধরা কিংসের জিকো ছিলেন স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে সেরা গোলরক্ষক। এই দুই গোলরক্ষকের পারফরম্যান্স বলে দিচ্ছে পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে সব ভয়কে জয় করা যায়।

রানা বলেন, ‘এর আগে ফেডারেশন কাপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু লিগে সেরা হওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা। ভালো খেলেছি বলে সেরা স্বীকৃতি পেয়েছি। যা আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। চেষ্টা করব দেশকে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার। তিনি বলেন, ‘সান্টু, মহসিন ও কানন ভাইদের দৃঢ়তার কথা শুনেছি। কিন্তু বয়স কম ছিল বলে তাদের খেলা দেখা সম্ভব হয়নি। আমিনুল ভাইয়ের খেলা দেখিছি। বলতে পারেন উনাকে অনুকরণ করেই আমি এগুচ্ছি। জিকো সম্পর্কে বলেন, ‘ও অবশ্যই উচুঁমানের গোলরক্ষক। তার দৃঢ়তায় বসুন্ধরা কিংসের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা সহজ হয়েছে।

অন্যদিকে জিকো বলেন, ‘রানা ভাইকে আমি অভিনন্দন জানাই সেরার পুরস্কার পাওয়ার জন্য। তবে আমিও আশাবাদী ছিলাম সেরা গোলরক্ষক হব। সারা লিগে কেমন খেলেছি দর্শকরা নিশ্চয় তা দেখেছেন। যাক বিচারকরা যোগ্য মনে করেননি বলে পুরস্কার আমার হাতে উঠেনি। স্বাধীনতাকাপে রীতিমতো ম্যাজিক প্রদর্শন করেন জিকো। কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ৩ ও সেমিফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে ২টি গোল সেভ করেন। হন টুর্নামেন্ট সেরা। জিকো বলেন, ‘ফুটবল জেগে উঠতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস সামনে আরও ভালো করব। এ জন্য দোয়া ও সবার সহযোগিতা চাই।’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর