বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচটি গতকাল মাঠে গড়ায়নি। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ায় বিকাল ৪টায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। শূন্য হাতে রাতেই দেশের পথে রওনা দেন টাইগাররা। ফ্লাইট ছিল রাত ১১টায়। গত রাতে এয়ারক্রাফটে ওঠার পর দলের একটি সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাদেশ দল বিমানে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশ দলকে বহনকারী বিমানটি রাত ২টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা।
প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় সিরিজে হার আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। গতকাল ছিল সিরিজে ব্যবধান কমানোর সুযোগ! কিন্তু ম্যাচে কোনো বলই মাঠে গড়ায়নি। অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দল যে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে জয়ের আশা করাও কঠিন ছিল!
নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও বাংলাদেশ পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল সিরিজ জয়ের আশায়। কিন্তু সিরিজ জয় তো দূরের কথা দুই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি মাহমুদুল্লাহর দল। প্রথম ম্যাচে তবু শেষ ওভার পর্যন্ত পাকিস্তানকে ব্যাট করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা পাত্তাই পায়নি। আইসিসি টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান যে এক নম্বর দল সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে দাপুটে পারফরম্যান্সে। অন্যদিকে টাইগাররাও যে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং বাজে খেলা প্রদর্শন করে প্রমাণ করেছেন কেন তারা এখনো টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে পড়ে আছে।
অথচ এই সিরিজের আগে পাকিস্তান কেবল নামেই র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর ছিল! কেন না ১০ ম্যাচের মধ্যে তাদের জয় ছিল মাত্র ১টি। ঘরের মাঠে তারা শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির দলের কাছে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। অন্যদিকে আগের সিরিজেই বাংলাদেশ দল টালমাটাল অবস্থার মধ্যে ভারতে গিয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধান করেছিল। তাছাড়া এ সফরের আগে বিপিএলে খেলার কারণে প্রস্তুতিও ভালো ছিল বলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু দেখা গেল ফল হলো উল্টো!
টাইগাররা যেন টি-২০ খেলতেই ভুলে গেছে। প্রথম ম্যাচে ১৪১ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৬। বাংলাদেশ দলকে দেখে মনে হচ্ছিল তারা ভীত সন্ত্রস্ত! তবে এই ভয় নিরাপত্তার কারণে নয়, পাকিস্তানের পেস বোলিংকে ভয়!
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১৪২ রানের টার্গেট দিয়েও শেষ ওভারে ম্যাচটি গিয়েছিল বলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে এমনটা ভাবার উপায় নেই। কেন না ওই ম্যাচে একবারের জন্যও মনে হয়নি বাংলাদেশের জেতার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল! বরং প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ বড় স্কোর করতে পারেনি বলেই আয়েশিভাবে ব্যাটিং করেছে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। স্কোর বড় হলে নিশ্চিয়ই তাদের ব্যাটিংয়ের গতিও অন্যরকম থাকত! দ্বিতীয় ম্যাচে তো রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেয়েছেন মাহমুদুল্লাহরা।
বৃষ্টির কারণে শেষ ম্যাচটি মাঠে না গড়ানোয় যেন তৃপ্তি পাওয়ার কথা মাহমুদুল্লাহদের! অযথা কষ্ট করতে হলো না! হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকেও তো রক্ষা পাওয়া গেল। এরপর আরও দুবার পাকিস্তানে যাবে বাংলাদেশ। পরের মাসেই একটি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে। তারপর এপ্রিলে এক টেস্ট। বরাবরই পাকিস্তান টেস্টে অনেক ভালো দল। টি-২০ সিরিজ নিয়েই যা আশা ছিল, সেখানেও তো হতাশা! বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচে ঠিকঠাক খেললেও টি-২০ ও টেস্টে কেমন যেন গুলিয়ে ফেলে! তাই তো দেখা যায়, টেস্টে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে দ্রুত আউট হয়ে যায়। আর টি-২০তে উইকেট হাতে থাকার পরও ব্যাটিং করে শম্বুক গতিতে। অর্থাৎ টি-২০কে টেস্ট মনে করে খেলে, আর টেস্টকে মনে করে টি-২০! ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসছে জিম্বাবুয়ে। এভাবে হ-য-ব-র-ল ক্রিকেট খেলতে থাকলে আফ্রিকান দলটির বিরুদ্ধেও যে লজ্জায় পড়তে হবে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।