শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিরিজ জয়

সবুজ গালিচায় পেস রাজত্ব

আসিফ ইকবাল

সবুজ গালিচায় পেস রাজত্ব

ম্যাচ সেরা হাসান মাহমুদ

সত্তর, আশির দশকে গতি, সুইং ও বাউন্সে ক্রিকেটবিশ্ব কাঁপিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি, জেফ টমসন, পাকিস্তানের ইমরান খান, ভারতের কপিল দেব, নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, ইংল্যান্ডের স্যার ইয়ান বোথাম, বব উইলিসরা। নব্বইয়ের দশকে এসব তারকার দেখানো পথে মাঠে ঝড় তুলেছেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, অ্যালান ডোনাল্ড, চামিন্দা ভাস, ব্রেট লিরা। বিশ্বসেরা তারকা পেসারদের গতি, সুইং কিংবা বাউন্স নেই তিন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও ইবাদত হোসেনের। কিন্তু আগ্রাসি মেজাজ কোনো অংশে কম নেই। গতকাল পেসারত্রয়ী ঝড় তুলেছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের উইকেটে। তিন টাইগার পেসার এতটাই বিধ্বংসী মেজাজে বোলিং করেছেন যে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে বোলিংয়েই দেখা যায়নি। ২৩১ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিব তৃতীয়বারের মতো কোনো ম্যাচে বোলিং করতে পারেননি। বাংলাদেশের ৪০৯ ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম তিন পেসার প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নিয়েছেন; যা নতুন রেকর্ড। ডান হাতি ফাস্ট বোলার হাসান মাহমুদ তার আট ম্যাচ ক্যারিয়ারে এই প্রথম ‘ফাইপার’ বা ৫ উইকেট নিয়েছেন। বাকি উইকেটগুলোর ৩টি নিয়েছেন তাসকিন ও ২টি ইবাদত। তিন পেসারের টর্নেডো বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানে। বাংলাদেশ সেই রান টপকে গেছে দুই ওপেনার লিটন দাস ও অধিনায়ক তামিমের শতরানের জুটিতে মাত্র ১৩.১ ওভারে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রতি ম্যাচেই রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। প্রথম দুটি ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে আইরিশ বোলারদের দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলেছিল তামিম বাহিনী। যে কোনো দলের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়েছে প্রথম ওয়ানডেতে। টাইগাররা জিতেছিল ১৮৩ রানে। ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল, যা ছিল সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। ওই ম্যাচে সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লেখান। দ্বিতীয় ওয়ানডে ভেসে যায় বৃষ্টিতে। জয় না পেলেও বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে তামিম বাহিনী। দলগত সর্বোচ্চ ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের রেকর্ড গড়ে টাইগাররা। সুনামি গতিতে ব্যাটিং করে মুশফিক ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাত্র ৬০ বলে; যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লেখেন মুশফিক। রেকর্ডে ভরা ইনিংস হলেও বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিত হয়নি। গতকাল তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি ছিল সিরিজ মীমাংসার। ম্যাচটিতে বৃষ্টি আবহাওয়াকে পেছনে ফেলে নিজেকে আলোকিত করেন হাসান মাহমুদ। সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলেননি। মুস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচে সুযোগ হয়নি বোলিংয়ের। গতকাল সিলেটের সবুজ ঘাসের উইকেটে বোলিং করতে নেমেই আইরিশ ব্যাটারদের ‘ত্রাস’ হয়ে ওঠেন। ম্যাচসেরা হাসানের স্পেলটি ছিল ৮.১-১-৩২-৫। তাসকিনের স্পেল ১০-১-২৬-৩ এবং ইবাদতের ৬-০-২৯-২। তিন পেসার ২৪.১ ওভারে রান দিয়েছেন ৮৭। ডট বল নিয়েছেন ১০৪টি। বাউন্ডারি খেয়েছেন ১০টি। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে বিধ্বংসী বোলিং করেনি পেস বিভাগ। এই প্রথম কোনো ইনিংসের ১০ উইকেটই নিয়েছে টাইগার পেসাররা। হাসান-তাসকিন-ইবাদত ত্রয়ীর বিধ্বংসী বোলিংয়ে বাংলাদেশ এই প্রথম ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে।

সিলেটের উইকেট বানানো হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট সামনে রেখে। ভারতীয় উইকেটগুলোয় হালকা ঘাস থাকায় পেসাররা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। সফরকারী আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন টাইগার পেসাররা। ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর