পাকিস্তান খেলবে, পাকিস্তান খেলবে না-এ নিয়ে গত দুই-তিন সপ্তাহ নির্ঘুম রাত পার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভায় পাঁচ জাতির এশিয়া কাপ বাংলাদেশে আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল। তারপরও রয়ে গিয়েছিল শঙ্কা। গতকাল সেটা উবে গিয়েছে পুরোপুরি। মিলিয়ে গেছে কুয়াশায় ঢাকা আকাশে। পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারিই মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া কাপের ১২ নম্বর আসর এবং খেলছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। পাঁচ দলের আসরের বাকি চার দেশ স্বাগতিক বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। এবারই প্রথম খেলছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। ৮ মার্চ ফাইনাল এবং মোট খেলা ১১টি। সবগুলো ম্যাচই দিবা-রাত্রির। টুর্নামেন্টের খেলাগুলো হবে দুই ভেন্যুতে। আসরের প্রথম পাঁচ ম্যাচ ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে এবং ফাইনালসহ পরের ছয় ম্যাচ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। উদ্বোধনী ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপের ফিকশ্চার ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বিষয়টি। নিশ্চিত করেন এসিসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক। গত পরশু পাকিস্তানের জনপ্রিয় পত্রিকা 'দৈনিক ডন'এ প্রকাশিত হয় এশিয়া কাপের আয়োজক হওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কাকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো উত্তর না দিয়ে এসিসির সিইও বলেন, 'আবারও বাংলাদেশে এশিয়া কাপের বসছে বলে উৎফুল্ল আমি।' এশিয়া কাপের সর্বশেষ আসর বসেছিল ২০১২ সালে। সেবারও আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। চার জাতির টুর্নামেন্টের সবগুলো খেলা হয়েছিল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের পুনরায় আয়োজক হওয়া প্রসঙ্গে আশরাফুল হক বলেন, 'গত আসর সফলভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। এখানকার ক্রিকেটপ্রেমীরা সমর্থন যুগিয়েছিল সব দলকে। কিছুদিন ধরে এখানে হয়তো সমস্যা হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের বিষয়ে এখানকার সবাই এক।' এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০০ সালেও এশিয়া কাপ বসেছিল বাংলাদেশে। নানা টানাপড়েনের পরও আয়োজন নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকায় উচ্ছ্বসিত বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন, 'হাইপ্রোফাইল এশিয়া কাপের আবারও আয়োজক হতে পেরে ভালো লাগছে। এটা আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়াবে। ধন্যবাদ এসিসিকে আমাদের আয়োজক করায়।' এশিয়া কাপের আগে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে এ মাসের ২৪ তারিখে ঢাকায় পা রাখছে শ্রীলঙ্কা। এরপর ১৬ মার্চ থেকে টি-২০ বিশ্বকাপ।
আফগানিস্তান এবারই প্রথম খেলছে। ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিত ওয়ানডে খেলছে দেশটি। আফগানিস্তানের আগে ২০০৮ সালে হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এশিয়া কাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আফগানিস্তানকে খেলার সুযোগ দেওয়ার ব্যাখ্যায় এসিসির সিইও বলেন, 'গত দুটি টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের পারফরম্যান্স খুবই ভালো। এছাড়া আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের উন্নতিই সবচেয়ে বেশি। এসব বিবেচনায় তাদের খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।' আসরে আফগানিস্তানের প্রথম প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী পাকিস্তান।
আসরে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ভারত। খেলা ২৬ ফেব্রুয়ারি। ১ মার্চ দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ নবাগত আফগানিস্তান, তৃতীয় ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ মার্চ এবং শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ মার্চ। লিগ পর্বের খেলায় কোনো বিরতি নেই। শুধুমাত্র ফাইনালের আগে একদিন বিরতি। ২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি ৬০ হাজার ডলার। রানার্স আপ ৩০ হাজার ডলার। গ্রুপ ম্যাচে জয়ী দল পাবে ১০ হাজার ডলার। এছাড়া 'প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট' সাড়ে ১২ হাজার ডলার, 'ম্যান অব দ্য ফাইনাল' সাড়ে ৭ হাজার ডলার এবং লিগ পর্বের সেরা খেলোয়াড় পাবে ৫ হাজার ডলার। খেলা দেখাবে স্টার টিভি এবং প্রতিটি ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।