ফুটবলে পুল প্রথা চালু হয়েছিল। শক্তির ভারসাম্য রাখতে এক দলে যেন অধিক জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা খেলতে না পারেন সেই চিন্তা করে বাফুফে পুল প্রথা চালু করেছিল। কিন্তু শীর্ষ স্থানীয় ক্লাবগুলোর অপশক্তির কারণে পুল প্রথা বাতিল হয়ে যায়। এ নিয়ে অবশ্য খেলোয়াড়রাও নীরব ছিলেন না। তাদের বক্তব্য ছিল ফুটবলারদের একমাত্র আয়ের উৎস্য ক্লাবগুলো। পুল প্রথা চালু করলে তারা পথে বসে যাবে। কারণ সব ক্লাবতো আর বেশি অর্থ দিতে পারছে না। যারা পারে সেই ক্লাবে খেললে সমস্যাতো নেই। বাফুফেও লক্ষ্য করেছে পুল প্রথায় লিগের আকর্ষণ নষ্ট হতে পারে। তাই দলবদলে আর কোনো বিধিনিষেধ রাখেনি। অবশ্য মধ্যম সারির ক্লাবগুলোর দাবি ছিল জাতীয় দলের খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক পদ্ধতি চালু করা। আসলে পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার পর পুল প্রথার চিন্তাও মাথায় আনেননি কেউ। কারণ নেবে কিভাবে দল অংশগ্রহণ করে হাতে গোনা ১০ বা ১১টি। পুল প্রথা চালু হলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সমস্যায় পড়ে যাবেন। এই মানবিক দিকটা চিন্তা করেই বাফুফে নতুন কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি।
এখন নাকি এই সিদ্ধান্তের চিন্তা ভাবনা করছে বাফুফে। আর তা বাস্তবায়িত হলে ফুটবলাররাই দায়ী থাকবেন। লিগের তারিখ নির্ধারণের আগে লিগ কমিটির সঙ্গে ক্লাব কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেশ কজন কর্মকর্তা অভিযোগ তোলেন কিছু ফুটবলার রীতিমতো ক্লাবকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। গত কয়েক মৌসুম ধরে লিগ চলাকালেই দল ছাড়ার গোপনীয় আলাপের পাশাপাশি মোটা অংকের অগ্রিম পেমেন্টও নিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় তারা মাঠে মনোযোগী হয়ে খেলছেন না। কেউ কেউ আবার অযথা ফাউল করে লাল কার্ডও দেখছেন। লিগ কমিটি অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে তার জন্য দায়ী ক্লাবগুলোই। কারণ তারা মৌসুম শেষ না হতেই খেলোয়াড়দের হাতে অগ্রিম পেমেন্ট তুলে দেয় কেন। এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ থাকছে না বলে লিগ কমিটি ক্লাব বা খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বৈঠকে নাকি আলোচনা হয়েছে এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় পুল বা দলবদলে ক্রিকেটের মতো ক্যাটাগরি চালু করা। কারণ ফুটবলাররা সিন্ডিকেট করেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এই সিন্ডিকেট ভাঙতেই আগামী মৌসুমে ফুটবলারদের যোগ্যতা অনুযায়ী দলবদলে ক্যাটাগরি চালু করা। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এ ব্যাপারে বলেন, অভিযোগ করলে চলবে না। প্রমাণ দেখাতে হবে। তাছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন না কোনো ক্লাব মৌসুম চলাকালেই ফুটবলারের হাতে অগ্রিম পেমেন্ট তুলে দেবেন। কারণ ওই খেলোয়াড় যে ইনজুরি সমস্যা বা সামনেও ভালো খেলবে এমন নিশ্চয়তা কি দেওয়া যায়। বিশেষ করে লিগ শেষের পরই পছন্দের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে। তবে এটা ঠিক কোনো কোনো খেলোয়াড় দুই ক্লাব থেকে অর্থ নেন। আমরা কিন্তু প্রমাণ পেয়ে এসব খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি।
পুল বা ক্যাটাগরি প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে লিগ কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া দেশে এমনিতেই নতুন ফুটবলার সৃষ্টি হচ্ছে না। এবার কেউ ভালো খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেল আর তাকে পুল বা ক্যাটাগরির তালিকায় যদি রাখা হয় তার গতি কি থাকবে। আগে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের অভাব ছিল না বলে ২/৩ মৌসুম পুল প্রথা চালু হয়েছিল। এখন সেই অবস্থা নেই, আমরা চাই ফুটবলের উন্নয়ন। তাই ফুটবলারদের স্বার্থটাই প্রাধান্য দেব। তিনি বলেন, ক্রিকেটের অবস্থা পুরোপুরি ভিন্ন। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বোর্ড থেকে ক্রিকেটাররা বেতন পান। ফুটবলারদের সেই ফ্যাসালিটিজ কি আমরা দিতে পারছি। সত্যি কথা বলতে কি পুল প্রথা চালু হলে ফুটবল মানে অবনতি ঘটবে। আরও কয়েক বছর যাক অবস্থা বুঝে দলবদল নিয়ে তখন নতুন চিন্তা ভাবনা করা যাবে। জাতীয় দলের বেশ কজন সাবেক ফুটবলার সালামের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাদের কথা ফুটবলাররা এখন যে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন সেই মান অনুযায়ী খেলতে পারছে না। পুল প্রথা চালু হলে বরং ভালো খেলতে আরও মনোযোগী হবে।