ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এখন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ইতিমধ্যেই ব্যাটসম্যান কোহলির দখলে অনেকগুলি রেকর্ড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোহলির মানসিকতায় ঘটেছে বিপুল বদল। এক সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছিলেন, যখন উঠতি ক্রিকেটাররা তাঁর মতো ক্রিকেটার হওয়ার কথা বলবে, তখন তিনি সবচেয়ে খুশি হবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। এখন অনেক উঠতি ক্রিকেটারই কোহলির মতো হতে চায়। আজ কোহলির ২৯ তম জন্মদিন। ১৯৮৮ সালের এই দিনে দিল্লিতে জন্ম কোহলির।
এমন একটা সময় ছিল যে, কোহলির ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ব্যাটে তেমন রান করতে পারছিলেন না। কিন্তু পরিশ্রম ও নিষ্ঠার জোরে সেই কঠিন সময়কে পিছনে ফেলেছেন তিনি। শচীন টেন্ডুলকরের মতো ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ নিয়ে নিজের ব্যাটিংয়ের অনেক বদল ঘটিয়েছেন। শুধু খেলাই নয়, মাঠে কোহলির আচরণেরও অনেক বদল হয়েছে। একটা সময় মেজাজ হারাতে দেখা যেত তাঁকে। এখন ক্রমশ পরিণত হয়ে উঠেছেন কোহলি।
এ সবের মধ্যেও কোহলির ক্রিকেটের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। ২০০৬ সালের রঞ্জি ট্রফির একটি ম্যাচে যে কোহলিকে দেখা গিয়েছে, তারপর তাঁর ক্রিকেটের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশই নেই। ওই একটা ম্যাচই কোহলির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ম্যাচে যে দিন কোহলির ব্যাটিং করতে নামার কথা ছিল, তার আগের দিন রাতেই মারা যান তাঁর বাবা। বিরাটের সামনে দুটি বিকল্প ছিল মাঠে নেমে নিজের দল দিল্লির হার বাঁচানো অথবা বাবার শেষকৃত্যের জন্য চলে যাওয়া। পুরো দলই মনে করছিল যে, কোহলি হয়ত ফিরেই যাবেন। কিন্তু পরের দিন সবাইকে অবাক করে ব্যাটিং করতে নামলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ৯০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে কর্নাটকের কাছে দিল্লির হার বাঁচিয়েছিলেন তিনি।
ওই একটা ইনিংস কোহলির নতুন একটা পরিচয় দিল। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যান। নিজের ইনিংস খেলে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেন তিনি।
বাবার মৃত্যুর পর কোহলি ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য তিনি যা করেছেন, তার কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
পরে এক সাক্ষাত্কারে কোহলি বলেছেন, ওই দিন যদি মাঝপথে খেলা ছেড়ে চলে যেতেন, তা খুব খারাপ হত।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে কোহলি ভারতের অধিনায়ক হন। টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফর্ম করেন তিনি। ৪৭ গড়ে করেন মোট ২৪৭ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৪৭ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে শোরগোল ফেলে দেন।
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের বদৌলতে ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতীয় দলে জায়গা পান কোহলি। শচীণ ও শেবাগ ফিট না থাকায় ওপেনার হিসেবে দলে নেওয়া হয় তাঁকে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজে কোহলি ৩২ গড়ে ১৫৯ রান করেন। এর মধ্যে ছিল একটি অর্ধ শতরানের ইনিংস।
২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। ওই ম্যাচে ৩১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৩ রানের মধ্যে শচীন ও শেবাগের উইকেট হারিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। কোহলির ইনিংসে ভর করে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। কোহলি করেন ১০৭ রান। গৌতম গম্ভীর ১৫০ রানে অপরাজিত থাকেন।
একদিনের ক্রিকেটে কোহলি এখনও পর্যন্ত ২০২ ম্যাচে প্রায় ৫৬ গড়ে ৯০৩০ রান করেছেন।টেস্টে কোহলির অভিষেক হয় ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই সিরিজে একেবারেই ভালো পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই একই টেস্টে দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেন কোহলি। ২০১২ সালে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ৬০টি টেস্টে প্রায় ৫০ গড়ে ৪৬৫৮ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি সেঞ্চুরি। সূত্র: এবিপি আনন্দ
বিডি-প্রতিদিন/০৫ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব