চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকার কলাবাগিচা খাল। এ খালের পাড়ে দাঁড়ালে বুঝার কোনো উপায় নেই এটি একটি খাল! দৃষ্টি জুড়ে দেখা যাবে সবুজ ঘাস, বৃক্ষ ও লতা। খালের ওপরই গজে উঠেছে ঘাস। পানির কোনো চিহ্ন নেই। নেই পানি চলাচলের দৃশ্য। পাড়েই আছে আবর্জনার স্তূপ। হয়েছে দখল। খালের বুকেই আছে বসতি-স্থাপনা। হ্যাঁ, এটিও একটি খাল। এই খাল দিয়েই পাথরঘাটা, ইকবাল রোড, জলিলগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ত। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য  ইতিহাস। অভিন্ন দৃশ্য পাশের বিবি মরিয়ম খাল এবং টেকপাড়া খালের। এ দুটি খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কোনো দৃশ্যই দেখা যায় না। সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। চট্টগ্রাম নগরের ৫৭টি খালের অধিকাংশই এখন বেহাল অবস্থা। দখল, ভরাট, আবর্জনায় নাকাল হয়ে আছে। কোথাও চসিক নিজে, কোথাও স্থানীয় বাসিন্দা, কোথাও বাণিজ্যিকভাবে দখল করা হয়েছে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় পানি নিষ্কাশন। তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
ইতিহাস। অভিন্ন দৃশ্য পাশের বিবি মরিয়ম খাল এবং টেকপাড়া খালের। এ দুটি খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কোনো দৃশ্যই দেখা যায় না। সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। চট্টগ্রাম নগরের ৫৭টি খালের অধিকাংশই এখন বেহাল অবস্থা। দখল, ভরাট, আবর্জনায় নাকাল হয়ে আছে। কোথাও চসিক নিজে, কোথাও স্থানীয় বাসিন্দা, কোথাও বাণিজ্যিকভাবে দখল করা হয়েছে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় পানি নিষ্কাশন। তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।     
তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সেনাবাহিনীর সহায়তায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায়
প্রথম পর্যায়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ১৩টি প্রধান খালের জরিপ করে ১২৩ একর জায়গা অবৈধ দখলে এবং খালগুলোতে ছোট-বড় ও পাকা, আধাপাকা, কাঁচা ঘরসহ অবৈধ ১ হাজার ৫৭৬টি স্থাপনা চিহ্নিত করে। গত ২ জুলাই থেকে সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। অভিযানে নগরের রাজা খাল, নোয়া খালসহ কয়েকটি খালের অর্ধশত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।
মেগা প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মঈনুদ্দিন বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৩৬টি খাল খনন, পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১১টি খালের কাজ শুরু হয়েছে। উচ্ছেদ করা হচ্ছে ১৩টি খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা। নির্মাণ করা হচ্ছে খালের মুখে স্লুইস গেট। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খালগুলোর আসল চেহেরা ফিরে পাবে।’
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরে ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৫৭টি খাল আছে (সিডিএ বলছে ৩৬টি)। এর মধ্যে ২০টি খাল সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশছে, ১০টি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে এবং দুটি হালদা নদীর সঙ্গে মিশছে। অন্যগুলো মিশেছে বিভিন্ন খালের সঙ্গে। তবে তিনটি খালই নগরের পানি নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা রাখে। এগুলো হলো ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চাক্তাই খাল, ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রাজা খাল এবং ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মহেশখাল। কিন্তু এ তিনটি খালই পড়েছে দখল ও ভরাটের কবলে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, ‘চউক জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই এখন চসিক খাল পরিষ্কার নিয়ে কোনো কাজ করছে না। তবে চসিক নালা-নর্দমা পরিষ্কারে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।’ জানা যায়, ১৯৯৫ সালে প্রণীত মহাপরিকল্পনায় চকবাজার, দেওয়ানবাজার, জামাল খান, স্টেডিয়াম, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চাক্তাই খালকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ খালটি এখন চট্টগ্রামের দুঃখ হিসেবে পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনে খালটি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি হলেও দখল, ভরাট-আবর্জনার স্তূপের কারণে অধিকাংশ অংশে প্রাকৃতিক খালের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই এখানে। চকবাজার ধোনির পুল, মিয়াখান নগর, দেওয়ানবাজার, মাস্টারপুলসহ বিভিন্ন অংশে দেখা যায় খালের পাড় তো বটেই, কোথাও কোথাও খালের মধ্যেও দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নগরের নন্দনকানন পাহাড় থেকে সৃষ্ট বদরখালী খাল আন্দরকিল্লা, লালদীঘির পূর্ব পাড়, বদরপট্টি, টেরিবাজার, কোরবানিগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, মিয়াখান নগর হয়ে বাঁশঘাটা এলাকায় মিশেছে চাক্তাই খালের সঙ্গে। এ খালটি দিয়েই এসব এলাকার পানি প্রবাহিত হয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। কিন্তু এটির এখন বেহাল অবস্থা। কোথাও খালের চিহ্ন আছে, কোথাও নেই। কোথাও মনে হয় ড্রেন। বদর খালের মধ্যেই চসিক নির্মাণ করেছে দুটি ভবন। একই সঙ্গে বড় কবরস্থান, অছি মিয়ার বাড়ি, আমিন হাজী রোড ও ইসমাইল হাজী রোড, নয়া মসজিদ পশ্চিমপাড়া এলাকায় সংযুক্ত হওয়া বির্জা খালের অবস্থাও অভিন্ন। অধিকাংশ স্থানেই কমে গেছে প্রশস্ততা। কোথাও ড্রেনের চেয়েও ছোট। অন্যদিকে, নগরের মোগলটুলি, কমার্স কলেজ এলাকা ও আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার পানি প্রবাহিত নাসির খাল দিয়ে। কিন্তু এ খালটিও দখল-ভরাটের কবলে। অবৈধভাবে খালের দুই পাড় দখলে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা স্থাপনা। মির্জা খাল দিয়ে প্রবাহিত হয় নগরের ষোলশহর, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা, শুলকবহর ও বহদ্দারহাটসহ প্রায় ২১৮০ হেক্টর এলাকার পানি। কিন্তু এটির বেদখলের চিত্রও ভয়ানক। মির্জাপুল এলাকার অংশটি বর্জ্য ও মাটি দিয়ে প্রায় ভরাট।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        