মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

খাল রক্ষায় মরিয়া দুই সিটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

খাল রক্ষায় মরিয়া দুই সিটি

ঢাকা ওয়াসা থেকে খালের মালিকানা পেয়ে রাজধানীর খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, দখল ও দূষণ রোধে তৎপর দুই সিটি করপোরেশন। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদি প্রকল্প। আসন্ন বর্ষায় খালে স্বচ্ছ পানির ধারা বইবে-এমন প্রত্যাশা ঢাকাবাসীর ছবি : রোহেত রাজীব

বাসাবাড়ির বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক, আবর্জনায় বন্ধ ছিল রামচন্দ্রপুর, ইব্রাহিমপুর, মান্ডা, জিরানীসহ রাজধানীর ২৬ খাল। দখলদারদের থাবা ও ময়লার স্তূপে ক্ষীণ হয়ে এসেছিল খালের পানিপ্রবাহ। ওয়াসার কাছ থেকে খালের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাতে আসতেই শুরু হয়েছে পরিচ্ছন্নতা ও উচ্ছেদ অভিযান। তিন স্তরের পরিকল্পনা ও প্রকল্প নিয়ে খাল বাঁচাতে মরিয়া দুই সিটি করপোরেশন।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এসব খালের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে খাল এবং নালা পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে টানা অভিযান পরিচালনা করছে দুই সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসি ২৬টি খাল থেকে বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি দখলদারদের উচ্ছেদে কাজ এবং ডিএসসিসি পাঁচটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ সিটির জিরানী, শ্যামপুর ও মান্ডা খাল এবং সেগুনবাগিচা ও পান্থপথ বক্স কালভার্টে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছে। খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে ১ লাখ ৬ হাজার টন পলিমাটি ও ২৬ হাজার ৯২০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন বলেন, ‘ওয়াসার কাছ থেকে খাল ও বক্স কালভার্ট বুঝে পাওয়ার পর থেকে আমরা তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে পুরোদমে আমাদের এ কার্যক্রম চলছে।’ ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, ইব্রাহিমপুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, গোদাগাড়ী খাল, রূপনগর খাল, সাগুফতা খালসহ ২৬টি খাল থেকে গত দেড় মাসে ৯ হাজার ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ডিএনসিসি। স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করবে এমন টিম গঠন, খাল খননের মতো কাজ, খাল তদারকিতে প্রথম ধাপে কয়েকটি খালে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। বর্ষার সময় কোথাও জলজট তৈরি হলে জরুরি ভিত্তিতে বর্জ্য সরিয়ে সে সমস্যা নিরসনে কাজ করবে কুইক সার্ভিস টিম। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সীমানা চিহ্নিত করতে সীমানা পিলার বসানো ও কাঁটাতারের মাধ্যমে খালের পাড়সমূহে বেড়া দেওয়া। জনবল নিয়োগ, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে খালে বর্জ্য না ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করা। খাল, ড্রেন পরিষ্কারে বিশেষ যন্ত্রপাতি কেনা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় খালের গভীরতা বাড়ানো, খাল দখল ঠেকাতে দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা, গাছের সারি, সাইকেল লেন তৈরি করা।

ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন ২৬টি খালে আমরা একযোগে অভিযান পরিচালনা করছি। ভাসমান ময়লা পরিষ্কার প্রায় শেষ। কিন্তু খালের কিছু জায়গা দখল দূষণে বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে মেশিন দিয়ে খুঁড়ে খালের গভীরতা বাড়াতে হচ্ছে। তাতে কিছুটা সময় লাগছে।’

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালের ভাসমান ময়লা পরিষ্কার কাজ প্রায় শেষ। খালের জায়গা দখল করে অনেক ঘরবাড়ি, দোকান করেছে। সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে মাটি খুঁড়ে গভীর করতে হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে আমরা খালপাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করব। যাতে পুনরায় দখলের পথ বন্ধ হবে। এ ছাড়া গাছের সারি ও সাইকেল লেন করা হবে। সমস্যা হচ্ছে, একদিকে পরিষ্কার করলে অন্যদিকে আবার ময়লা ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করে কাজ করছি। জনগণকে সচেতন করে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি।’

নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, খালের চার পাশে হাঁটার রাস্তা করে গাছ লাগিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিতে হবে। যাতে খালের জায়গা পুনরায় দখল না হয়। বেশি জায়গা থাকলে বসার জায়গা, সাইকেল লেন এমনকি জরুরি ক্ষেত্রে স্ট্রেচার কিংবা অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। তবে খাল পরিচ্ছন্ন রাখতে সবচেয়ে জরুরি পুনরায় ময়লা না ফেলা। এজন্য এলাকাবাসীকে যার যার বাড়ির সামনের খালের দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে হবে। খালের তদারকির জন্য তাদের পুরস্কৃতও করা যেতে পারে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করলে খাল পুনরায় বর্জ্যরে ভাগাড় হবে না।

সর্বশেষ খবর