দেশের প্রথম ডিজিটাল সিটি হবে সিলেট। সিলেট-১ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল এটি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। ডিজিটাল সিটি নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন সিলেটের মানুষ। কিন্তু সেই প্রকল্পের কাজ আর শেষ হয় না। দুই দফা সময় বাড়িয়েও ডিজিটাল সিটি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ফলে, ডিজিটালাইজেশনের প্রতিশ্রুত সব সুবিধা পাচ্ছেন না নগরবাসী। প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুতে ‘সিলেট ডিজিটাল সিটি’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নাগরিক সেবা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম, নগরজুড়ে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সড়কে চেহারা শনাক্তকরণসহ উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন। কিন্তু প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ করা সম্ভব হয়নি প্রকল্পের কাজ। তাই দ্বিতীয় দফায় আরেক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সংশোধিত ডিপিপির মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল সিটির অংশ হিসেবে এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রমকে অটোমেশন করার কথা ছিল। চালু হওয়ার কথা ছিল ‘হেলথ ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেম’। কিন্তু তিন বছরেও এই কার্যক্রম শুরুই করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মধুসূদন চন্দ্র জানান, চলতি মাসেই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অটোমেশন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্য এই কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রোগীদের সেবাপ্রাপ্তি অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, কোনো রোগীকে হাসপাতালে কী কারণে কোন ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাকে কোন কোন মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়েছিল এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে ডাটাবেজে। ওই রোগী যদি পরবর্তীতে আবারও হাসপাতালে আসেন, তবে ডাটাবেজ থেকে তার পূর্বের রোগের সব তথ্য সহজেই পাওয়া যাবে। ফলে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিক সেবা প্রদানও সহজতর হবে।
ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মধুসূদন চন্দ্র গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে অনেক দিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া সিলেট নগরীতে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের কারণেও কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।
তিনি জানান, প্রকল্পের মূল যে দুটি কম্পোনেন্ট ছিল তা ইতিমধ্যেই শেষ করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ফেস রিকগনিশনসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যামেরার দায়িত্ব সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ১২৬টি পয়েন্টে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো মানুষজন ব্যবহারও করতে পারছেন। ওয়াইফাই জোনগুলো সিলেট সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।