মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

উৎসবে প্রাণ ফিরেছে কেনাকাটায়

পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মানুষ। করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী থাকায় দুই বছর পর এবার কিছুটা চাঙা হয়েছে ঈদের বাজার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

উৎসবে প্রাণ ফিরেছে কেনাকাটায়

দীর্ঘ দুই বছর পর রাজধানীর শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। উৎসবে প্রাণ ফিরে এসেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে। ছবিটি নগরীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের - রোহেত রাজীব

রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। আর এক সপ্তাহ পরেই ঈদ। শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মানুষ। করোনা সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী থাকায় দুই বছর পর এবার কিছুটা চাঙা হয়েছে ঈদের বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, ভিড় এড়াতে এবার বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে কেনাকাটা। দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশা খুঁজছেন তারা। ক্রেতা টানতে নানা রকম আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষ কেনাকাটা করছেন ফুটপাথ থেকে। এ ছাড়া নগরীর বেশ কিছু বিপণিবিতানে সব ধরনের মানুষের জন্যই রয়েছে পণ্যের বিশাল সমারোহ।

গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। দোকানগুলোতে পণ্য দেখছেন এবং কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। কলাবাগানের বাসিন্দা সৈকত হামিদ দুই মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। তিনি বলেন, ঈদের বোনাস পাওয়ার পরে কেনাকাটা শুরু করেছি। প্রথমেই মেয়েদের পোশাক এবং জুতা কিনতে পেরেছি। ভীষণ ভিড় দোকানগুলোতে। এর মধ্যেই বড় মেয়ের থ্রিপিস কিনেছি। ছোট মেয়ের জন্য পছন্দ মতো জামা খুঁজছি।

ধানমন্ডি মেট্রো শপিং মল, রাপা প্লাজা, এআর প্লাজায় কেনাকাটা করতে ভিড় করছে মানুষ। ঈদের কেনাকাটার কারণে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনেও খোলা থাকছে মার্কেটগুলো। রাপা প্লাজায় কসমেটিক্সের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনতে এসেছিলেন রাইমা হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের পোশাক কেনা শেষ। এখন ম্যাচিং করে কানের দুল, মালা, ব্রেসলেট, লিপস্টিকসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী কিনতে এসেছি। এর পরে জুতা কিনব।’ নিজেদের কেনাকাটার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের জন্যও পোশাক কিনছেন নগরবাসী। এবার ঈদের সময় গরম পড়ায় হালকা সুতি কিংবা নরম কাপড়ের জামা বেশি কিনছেন ক্রেতারা। মেট্রো শপিং মলের পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মী সজীব আলী বলেন, গরমের তীব্রতার কারণে মানুষ পাতলা কাপড় এবং হালকা কালারের পোশাক বেশি কিনছে। প্রিন্টের ডিজাইনের ওপর সুতির গাউন এবং থ্রিপিসগুলো বেশ চলছে। শিশুদের পোশাকে ফতুয়া, টি-শার্ট বেশ চলছে।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলেন কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা সারোয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ জমে না। আমি সাধারণত এখান থেকেই পাঞ্জাবি কিনি। নীল রঙের পাঞ্জাবি খুঁজছি।

ঈদে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি দর্জি দিয়ে বানানো পোশাকেরও ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ কারণে ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়ে যায় দর্জিপাড়ায়। বাড়তি চাহিদা থাকায় পাড়া-মহল্লার দর্জি দোকানের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন নামিদামি টেইলার্সগুলোও। বিশেষ করে কাপড় বিক্রির পাশাপাশি যারা টেইলারিং সুবিধা দেয়, সেখানে ক্রেতা সমাগম বেশি দেখা যায়। এবারের ঈদে এসব নামিদামি টেইলার্সগুলোতে বেশ ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। তৈরি পোশাকের বাইরে তাদেরও ক্রেতা সমাগম চোখে পড়ার মতো।

রাজধানীর টেইলার্সশপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কারিগররা দিন-রাত কাজ করছেন। ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক ডেলিভারি দেওয়াই টার্গেট তাদের। এলিফ্যান্ট রোডের মেন’স ফ্যাশনের মালিক গওহর আলী বলেন, ১৫ রোজা থেকে আমরা অর্ডার নেওয়া বন্ধ করেছি। এবার সাড়া ভালো পেয়েছি। আশা করছি, চাঁদরাতের আগে সবার জামা, প্যান্ট তৈরি করতে পারব। গতবারের তুলনায় মজুরি খরচ কিছুটা বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেননা সুতাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। অনেক টেইলার্স অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।  এক্সিলেন্স ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্সের ঢাকায় পাঁচটি আউটলেট আছে। তাদের টেইলারিং সেকশনে এখনো অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। আরও দুই দিন চলবে অর্ডার নেওয়ার কাজ। এরপরও কেউ অর্ডার করলে নেওয়া হবে কিন্তু ডেলিভারি দেওয়া হবে ঈদের পরে। টেইলার্সে সুতির হাফ হাতা শার্ট বানাতে এসেছিলেন ফার্মগেটের বাসিন্দা কায়সার আজম। সাবেক সরকারি এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে এই টেইলার্সে পোশাক বানাই। গরমের কারণে নরম কাপড়ের হাফ হাতা শার্ট বানাতে এসেছি। ঈদের কারণে ভীষণ চাপ। পুরনো এবং পরিচিত হওয়ায় ঈদের আগের দিন শার্ট ডেলিভারি দেবে বলেছে।’

সর্বশেষ খবর