শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নগরজুড়ে ছোট নেতার বড় পোস্টার

রফিকুল ইসলাম রনি

নগরজুড়ে ছোট নেতার বড় পোস্টার

ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের সামনে ডিশ ও ইন্টারনেটের তারের সঙ্গে সারিবদ্ধ ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। আশপাশের দেয়ালে লাগানো হয়েছে ঢাউস আকারের পোস্টার। কেউ সাঁটিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড সম্মেলন সফল করা নিয়ে। কেউ টাঙ্গিয়েছেন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস সফল হোক শিরোনামে। আবার কেউ সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে। নানা রঙের, নানা ঢঙের পোস্টারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে হয় দুরবিন দিয়ে। আর যিনি এই পোস্টার লাগিয়েছেন তার ছবি রয়েছে আয়তনের অর্ধেকজুড়ে। তেমনি একাধিক পোস্টার সাঁটিয়েছেন বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান বাবলু। ফেস্টুনের এক কোনায় ছোট পরিসরে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী, অন্য পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির ছবি। সামান্য একটু বড় আছে ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের ছবি। আর নিজের ছবি ঢাউস আকারের। শুধু ফেস্টুনই নয়, পোস্টারও সাঁটিয়েছেন তিনি। এমন আরেকটি পোস্টার চোখে পড়ে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি সফল হোক-শিরোনামের ফেস্টুনে। দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে তা ঝুলছে। সেখানেও জাতির পিতার ছবি খালি চোখে দেখা বড়ই দুষ্কর। তবে প্রধানমন্ত্রীর ছবিটি ছোট হলেও দেখা যায়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও ছোট। কমান্ডার নূর ইসলাম মোল্লার ছবি ঢাউস আকারের। তিনি ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। পাশেই আরেকটি ফেস্টুন দেখা গেল বাংলাদেশ হকার্স লীগের। মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে যিনি ঢাউস আকারে ছবি দিয়ে ছাপিয়েছেন তিনি হলেন হাজী আনোয়ার হোসেন। তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। প্রধানমন্ত্রীর ছবি সামান্য বড় হলেও জাতির পিতাকে চোখে দেখা বড় কষ্টকর। পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের ছবির চেয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এস এম জাকারিয়া হানিফের ছবি অনেক বড়। শুধু ধানমন্ডি কার্যালয়ের সামনেই নয়, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এমন অসংখ্য ফেস্টুন, পোস্টার ও ব্যানার, প্যানা ফেস্টুন চোখে পড়ে, যেখানে ছোট নেতার বড় ছবির পোস্টার ব্যানারের আত্মপ্রচার।

ছোট নেতাদের বড় ছবির আত্মপ্রচারে বিরক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, জাতির পিতার ছবি ব্যবহারের কি কোনো নিয়ম-কানুন নেই? আইন বা নিয়মের কথা বাদ দিলাম, বঙ্গবন্ধুর প্রতি সামান্যতম ভালোবাসা থাকলে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িতরা এভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করত না। দরদ থাকলে কেউ নিজের আখের গোছানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর ছবি, নাম ব্যবহার করত না।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ধানমন্ডি, গাবতলী, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, শাহজাহানপুর, মহাখালী, সূত্রাপুর, ওয়ারী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, আদাবর, আগারগাঁও, উত্তরা, গুলশান, বনানী, ভাটারা, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে শোভা পাচ্ছে শত শত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড। কোথাও কোথাও সড়ক-ফুটপাতে সুবিশাল তোরণ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এ আয়োজন। তবে বঙ্গবন্ধু যেন উপলক্ষমাত্র। আসল উদ্দেশ্য ‘নেতা’দের আত্মপ্রচার। এসব পোস্টার-ফেস্টুনে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে ছাপিয়ে ছোট-বড় নেতাদের আত্মপ্রচারই মুখ্য হয়ে উঠেছে। দল বা সংগঠন নয়, ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া বেশির ভাগ পোস্টার-ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি স্থান পেয়েছে ওপরে বাঁ পাশে এক কোনায় ছোট করে। প্রচারকারীর নিজের এবং তিনি যাঁর অনুসারী, তাঁর বা তাঁদের ছবি আছে বিশাল অংশজুড়ে।

বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড-ইউনিটের নেতাদের পাশাপাশি ভুঁইফোড় সংগঠন আওয়ামী তৃণমূল লীগ, প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের মতো নামসর্বস্ব সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও নিজেদের প্রচারে নেমেছেন। এমন অনেকেই পোস্টার করেছেন, যাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই। যারা সদ্য সাবেক হয়েছেন তাদেরও আত্মপ্রচারে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অসংখ্য দৃষ্টিকটু বিলবোর্ড রয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ মুন্নার ছবি দিয়ে। শনির আখড়ায় এমন একটি ছবি চোখে পড়ে। বিলবোর্ডের বাম পাশে একইভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেখতে হাজার পাওয়ারের চশমার প্রয়োজন। ডান পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক, দক্ষিণ সিটির মেয়র, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ছবি। বিলবোর্ডের অধিকাংশ জায়গাজুড়েই হারুন অর রশিদ মুন্নার ছবি। আর বিলবোর্ডের অর্ধেক রয়েছে ফিরোজ হাওলাদার, নাজমুল আলম আবির ও জাহাঙ্গীর আলমের ছবি। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে প্রবেশের আগেই আবদুল্লাহপুরে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের পিলারে সাঁটানো হয়েছে বিশাল একটি ব্যানার। ওই ব্যানারে বড় আকারে যার ছবি ছাপা হয়েছে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলের। রাজধানীতে চলাচল করে এমন অসংখ্য গাড়িতেও তার পোস্টারে আত্মপ্রচার করতে দেখা গেছে। এই নেতার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নানা অভিযোগ উঠলেও নগরজুড়ে শোভা পাচ্ছে তার বড় বড় ছবি। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, আত্মপ্রচারের একই অবস্থা দেখা যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনেও।

সর্বশেষ খবর