রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভবিষ্যতের যত প্রযুক্তি

সাইফ ইমন

ভবিষ্যতের যত প্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি খাত-------------

 

থ্রিডি হলোগ্রাম

থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে লাইট ব্যবহার করে তৈরি দ্বিমাত্রিক ছবিকে ত্রিমাত্রিক ছবি বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে যা বোঝাচ্ছেন সেই থ্রিডি হলোগ্রাম আর এ থ্রিডি হলোগ্রাম এক নয়। আমরা যে থ্রিডি হলোগ্রামের কথা বললাম এগুলো আকারে ছোট, অল্প আলোতে দেখতে হয় এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি আর মিক্সড রিয়েলিটির সমন্বয়ে এ হলোগ্রামগুলোকে বাস্তব থেকে বাস্তবতর করে তোলা। যেমনটি টম ক্রুজের মাইনোরিটি রিপোর্টে দেখা যায়, ঘরে বসে হাজার মাইল দূরের অফিসে স্বশরীরে কাজ করতে পারা!

 

 

ব্লকচেইন প্রযুক্তি

মানুষ বিটকয়েনের পরিবর্তে কারেন্সি প্রযুক্তিতে আগ্রহী। বস্তুত, ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। বিটকয়েন অন্য কোনো মুদ্রার মতো যা পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পার্থক্য হচ্ছে এটি ডিজিটাল। কিন্তু এ আধুনিক শতাব্দীতে সবকিছুই ডিজিটালাইজডের নিখুঁত মুদ্রাব্যবস্থা হবে। বিটকয়েনের সঙ্গে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে ব্লক ভরাট করার মতো যা প্রদানের ডেটা রেকর্ড করে। প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত এ প্রযুক্তিটি এখনো খুবই নিখুঁত এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির সময় এবং সঠিক বিবর্তনের সঙ্গে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

 

ভবিষ্যতের স্মার্টফোন

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ভবিষ্যতের স্মার্টফান ভাঁজ করে রাখা যাবে। বিশ্বের নামকরা প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্টফোনে এখনো অনেক প্রযুক্তিই আসা বাকি আছে। পাশাপাশি বর্তমানে যেসব ফিচার ফোন প্রচলিত আছে, সেগুলো আরও উন্নত হবে। বাড়বে স্মার্টফোনের ক্ষমতাও। অগমেন্টেড রিয়েলিটিও ব্যবহৃত হবে স্মার্টফোনে। এটি এক ধরনের যান্ত্রিক সেন্স। আমরা আমাদের সেন্স ব্যবহার করে যা অনুধাবন করি, তা একটি কম্পিউটার জেনারেটেড সেন্সরের মাধ্যমে করাই হলো অগমেন্টেড রিয়েলিটি। এ ছাড়া আপনি চাইলেই ফোনটিকে ফোল্ড করতে পারবেন। এমনকি তা দিয়ে কলমের মতো ব্যবহারও করা যাবে।

 

 

 

মাইন্ড রিডার

কারনেগি মেলন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক মারসেল জাস্ট এবং তার দল দীর্ঘদিন ধরে মাইন্ড রিডিং মেশিন তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এটি মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন। একজনের মনের কথা আরেকজন বলতে পারবে পড়তে পারবে। বিষয়টা কতটুকু ভালো কিংবা খারাপ হবে তা আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সায়েন্সফিকশন চলচ্চিত্রে দেখেছি। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কে এফএমআরআই বা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং ব্যবহার করছেন। আমরা যখন কোনো কথা বলি বা কোনোকিছু চিন্তা করি, আমাদের মস্তিষ্কে তখন বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্ন ফুটে ওঠে। এফএমআরআই ব্যবহার করে সেই প্যাটার্নগুলো তুলে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা। মারসেল জাস্ট বলেন, আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্ক একইভাবে কাজ করে, যদিও আমরা ভিন্ন ভাষাভাষী হই না কেন, একটি ইংরেজি ভাষা ব্যবহারকারী ব্যক্তির মনের ভাব বোঝার জন্য তৈরি করা মেশিন দিয়ে একজন মান্দারিন ভাষাভাষী লোকের মনের ভাবও বোঝা যায়। তবে তাদের মতে, এখানে কিছু জটিলতাও রয়েছে। এফএমআরআইয়ের সাহায্যে যে প্যাটার্নগুলো পাওয়া যায় তাতে কাছাকাছি অর্থের বাক্যগুলোর জন্য প্যাটার্নগুলো প্রায় একই ধরনের হয়। যেমন- ‘আমি রাগ করেছি’ বা ‘আমি বিরক্ত’ এ ধরনের বাক্যগুলোর জন্য একই ধরনের সংকেত পাওয়া যায়। ফলে নিখুঁতভাবে বাক্যটি উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে।

 

 

 

 

যোগাযোগব্যবস্থা

চালকবিহীন কার

বিশ্বের সব বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই এখন ‘ড্রাইভারলেস কার’ বা চালকবিহীন কার তৈরির জন্য শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। অনেক গাড়ি ইতিমধ্যে সফলভাবে রাস্তায় চলাচলও করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে এরকম গাড়ি যে বিশ্বের অনেক দেশের রাস্তাতেই দেখা যাবে তা নিশ্চিত। চালকবিহীন গাড়ির সুবিধে হচ্ছে যেহেতু কোনো ড্রাইভার দরকার হচ্ছে না তাই গাড়িটি বসে না থেকে সারাক্ষণ যাত্রী টানতে পারবে। এতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কমে আসবে গাড়ি চালানোর খরচও। চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে অটোমোবাইল প্রযুক্তি।

 

হাইপারলুপ প্রযুক্তি

ভবিষ্যতের বাহন হিসেবে সবচেয়ে বেশি চমক হলো হাইপারলুপ। সিলিকন ভ্যালির বিখ্যাত উদ্যোক্তাদের একজন এলন মাস্ক এ সুপার ফাস্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। মূলত একটি টিউবের ভিতর দিয়ে অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটবে কিছু যাত্রীবাহী ক্যাপসুল। বুলেট ট্রেন যেভাবে দ্রুত মানুষকে অনেক দূরের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে এটি তার চেয়েও বেশি গতিতে মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। বলা হচ্ছে ঘণ্টায় ১২০০ কি.মি. বেগে ছুটবে এ ক্যাপসুল। দ্রুতগতির এ ক্যাপসুল ব্যবহার নির্দিষ্ট দূরত্বের ক্ষেত্রে সত্যি অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে বলে সবাই ধারণা করছে।

 

জেটপ্যাক

জেটপ্যাক হবে ভবিষ্যতে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহন, বলছেন কুয়াংচি সায়েন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার কোকার। এটা হবে আকাশে উবার ট্যাক্সির মতো। স্মার্টফোনের অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ জেটপ্যাক ডাকতে পারবে। তারপর জেটপ্যাক আরোহীকে নিয়ে আকাশে উড়বে। নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক মার্টিন এয়ারক্রাফট কোম্পানি ইতিমধ্যে জেটপ্যাকের একটা প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে যেটি মাটি থেকে দুই হাজার ৮০০ ফুট উঁচু দিয়ে ঘণ্টায় ২৭ মাইল বেগে ২৮ মিনিট ধরে চলতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী কোনো ব্যবস্থা উদ্ভাবনের দরকার হবে।

 

 

ভবিষ্যতের ভাসমান বিমানবন্দর

আধুনিক জীবনে গতি একটি বড় ব্যাপার। আর এ গতির প্রশ্নে সবচেয়ে এগিয়ে বিমান। কিন্তু বিমানের জন্য চাই বিমানবন্দর। পৃথিবী যতই ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে ততই স্থান সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। একটি বিমানবন্দরের জন্য জায়গা বের করা খুব সহজ কাজ নয়। এ সমস্যা মাথায় রেখে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা কাজ করে আসছেন। কিছু বিজ্ঞানী তো পানির ওপর ফ্লিট বানানোর পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন। কিন্তু পানির ওপরের ফ্লিটেও কিছু ঝামেলা রয়েই যাচ্ছে। বিশেষত হংকং এবং ওসাকা এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে আছে। তারা সমুদ্রে তৈরি করছে বিশাল বিমানবন্দর। সান ডিয়াগোতেও এমনি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তারাও একটি ভাসমান বিমানবন্দর তৈরির উদ্দেশ্যে প্রকল্প প্রস্তাব করেছিল। ওশানওয়ার্কস ডেভেলপমেন্ট এবং ফ্লোট ইঙ্ক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান এ কাজের জন্য নির্ধারিত হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ব্যয় করা হয় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কোনো সফলতার খবর পাওয়া যায়নি। সান ডিয়াগোর ওই প্রকল্পটির স্বপ্ন দেখেছিলেন টেরি ড্রিনকার্ড নামের এক প্রকৌশলী। ড্রিনকার্ডের পরামর্শক ও প্রকৌশলী কমান্ডার বাড স্ল্যাবার্ট অবশ্য আশাবাদী ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নিয়ে। তার মতে, কিছু সরকার ইতিমধ্যেই ছোটো আকারে ভাসমান বিমানবন্দরের কথা ভাবছেন। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এ নিয়ে কিছু কাজও চলছে। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলে বিমান ব্যবহারের হার অনেক বেশি। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেখানে ভাসমান বিমানবন্দর আমরা পাব খুব শিগগিরই।

 

ন্যানোটেক

ধরুন আপনি এক অসাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো একটি বস্তুর অ্যাটমকে (পরমাণু) বা অ্যাটমের গঠনকে অন্য কোনো বস্তুর অ্যাটমের গঠনের সঙ্গে পরিবর্তন করে দিলেন। এর ফলে অসাধারণ সব উপকরণের উদ্ভব ঘটবে যা এ দুনিয়ায় আগে কখনোই ছিল না। আজকের দিনে নতুন রোগের ওষুধ থেকে শুরু করে আপনার কম্পিউটারের সুপার ফাস্ট প্রসেসর এবং অসাধারণ সব উপকরণ তৈরির পেছনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এক প্রযুক্তি কাজে আসছে যা ‘ন্যানো টেকনোলজি’ নামে পরিচিত এবং এটি বর্তমান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সবচাইতে আশ্চর্যকর নিদর্শন। ন্যানো টেকনোলজির বেশিরভাগ সুবিধা হয়তো ভবিষ্যতের কয়েক দশকের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে কিন্তু বর্তমানেও এ প্রযুক্তি নানাভাবে আমাদের পৃথিবীকে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করছে। আমাদের শরীরে প্রোটিন, ভাইরাস, ইত্যাদি ন্যানো টেকনোলজির সূত্রেই কাজ করে।

 

ভাইরাস বঞ্ঝাটারি

এমআইটির পাগলা বিজ্ঞানীরা এবার তৈরি করতে সক্ষম হন ভাইরাস থেকে ব্যাটারি! জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে বিশেষভাবে পরিবর্তিত ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট দ্রবণ থেকে অ্যানোড এবং ক্যাথোডের উপাদানগুলো আলাদাভাবে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। এ ধর্মকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের একটি কোষের চেয়েও ক্ষুদ্র ব্যাটারি তৈরি করেছেন যাতে সাধারণ ব্যাটারির মতো অ্যানোড-ক্যাথোড এবং দ্রবণ সবই আছে। সামান্য একটু দ্রবণ আর কয়েকটি ভাইরাস ছেড়ে দিলেই হয়ে যায় ব্যাটারি। এ যুগান্তকারী আবিষ্কারের বাস্তব প্রয়োগ আমরা দেখব ভবিষ্যতের পৃথিবীতে। এ আবিষ্কার আমাদের পরিচিত সব ডিভাইসের চেহারাই বদলে দিতে পারে। অনেক ক্ষুদ্র হওয়ায় এগুলো ফেব্রিকের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যাবে, ফলে আপনার শার্টটিই হতে পারে মোবাইলের চার্জার! ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোও আকারে-আয়তনে অনেক ছোট হয়ে যাবে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর