রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হিরোশিমা নাগাসাকি এখন তখন

রণক ইকরাম ও তানভীর আহমেদ

হিরোশিমা নাগাসাকি এখন তখন

কী হয়েছিল সেদিন

হিরোশিমা আর নাগাসাকির ইতিহাস মানব ইতিহাসের কলঙ্ক। এত নৃশংস, এত ঘৃণ্য আক্রমণ এর আগে কখনো পৃথিবী দেখেনি। এক মুহূর্তে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু। অসংখ্য মানুষকে তিল তিল করে অনিবার্য মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, জনপদের পর জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। হতচকিত হয়ে পড়ে বিশ্বের মানুষ। শুধু কি তাই? তেজস্ক্রিয়তার অভিশাপ থেকে যায় ভবিষ্যৎ প্রজম্মের জন্য। সেদিন এই ভয়ঙ্কর বর্বরতার জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিল না বিশ্বের মানুষ। একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের এভাবে মৃত্যু ছিল অকল্পনীয়। এই অচিন্তনীয় ধ্বংস দেখে সেদিন বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে কত ভয়ঙ্কর, কতটা মানবঘাতী হতে পারে, তা প্রত্যক্ষ করে মানুষ। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাটম্যান নামের দুটি  পারমাণবিক বোমা ফেলে। অনুমান করা হয়, এই হামলায় হিরোশিমায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার লোক মারা যান। নাগাসাকিতে মারা যান প্রায় ৭৪ হাজার লোক। পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২ লাখ ১৪ হাজার জন। বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগগুলোর ওপর হাসপাতাল  থেকে পাওয়া গণনার তথ্য অনুযায়ী হিরোশিমায় ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক  নাগরিক। শুধু তাই নয়, ওই দুই দিন মৃত্যুর নাগালের বাইরে যারা থাকতে পেরেছিলেন, তারাও তেজস্ক্রিয়তার ফলে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাদেরও ওই তেজস্ক্রিয়তার উত্তরাধিকার বহন করতে হচ্ছে। এর আগে মানুষের জীবনকে এরকম নির্মমভাবে থেঁতলে দেওয়া হয়নি। এখন বিশ্বে যত পরমাণু অস্ত্র আছে, তা দিয়ে পৃথিবীকে অনেকবার ধ্বংস করা সম্ভব।

ছবির মতো সুন্দর দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেদিন তার পেশিশক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিল। এখনকার পরমাণু অস্ত্রের তুলনায় হিরোশিমা, নাগাসাকির আণবিক বোমা নেহাতই শিশু। তাই একথা আজ বলাই যায় যে, বিশ্বে যে কোনো মুহূর্তে নেসে আসতে পারে সেই করুণ পরিণতি।

 

লিটল বয় আর ফ্যাটম্যানের ধ্বংসলীলা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের  দিকের ঘটনা। ৬ আগস্ট বেলা আড়াইটা। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী বিশ্ব মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লিয়ার বোমা ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে চমৎকার ঝকঝকে শহরটি পরিণত হয় মৃত্যুকূপে। লিটল বয়ের ওজন ছিল ৬০ কেজি। নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছতে এটি সময় নেয় ৫৭ সেকেন্ড। এই সময়ে এটি অতিক্রম করে ৬০০ মিটার দূরত্ব। এ বিস্ফোরণটি ঘটে ১৩ কিলোটন (টিএনটি)-এর সমান। সে সময় তাপমাত্রা হয়েছিল ৩৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বিস্ফোরণের পর ১ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকাজুড়ে ধ্বংসলীলা শুরু হয় এবং হিরোশিমার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। বোমা নিক্ষেপকারী পাইলট টিবেটস বিমান থেকে শহরের ভয়াবহ ধ্বংসের দৃশ্য দেখে ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, হায় ঈশ্বর এ কি করলাম!

হিরোশিমার ভয়াবহতার কারণ বুঝে ওঠার আগেই এর ঠিক তিন দিন পর জাপানেরই নাগাসাকি শহরে দ্বিতীয় বোমা ‘ফ্যাটম্যান’-এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ কলঙ্কজনক ঘটনার নেপথ্যে ছিল অস্ত্রের উন্নয়নে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্লজ্জ অমানবিক প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী ড. লিও জিলার্ড সর্বপ্রথম বোমা তৈরির উদ্যোগ নেন। এ বোমার মানবতাবিরোধী ভয়ঙ্কর ভয়াবহতার কথা বিবেচনা না করেই বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সমর্থন জোগান জিলার্ডকে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমায় আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার লোক মারা যান। পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা প্রণয়নে শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফ্যাটম্যান’ মডেল অনুসরণ করা হয়েছে। ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর ককুরা শহরকে লক্ষ্যস্থল করা হয়। কিন্তু আকাশজুড়ে মেঘ জমে থাকায় বিকল্প লক্ষ্যস্থল হিসেবে নাগাসাকিকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৩৯৩ডি বোম্ব স্কোয়াড্রনের মেজর চার্লস সুইনে বিমানটির পাইলট ছিলেন। ১ হাজার ৬৫০ ফুট উঁচু থেকে বোমাটি নিক্ষেপ করেন। এর ক্ষমতা ছিল ৮৮ টেরাজুল বা ২১ কিলোটন টিএনটি।

আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার ফলে সঠিকভাবে লক্ষ্যস্থল নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে বোমাটি  কেন্দ্রস্থল বিচ্যুত হয় এবং হিরোশিমার তুলনায় কম ক্ষতি করে। তবুও আনুমানিক ৩৯ হাজার লোক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ছাড়া ২৫ হাজার লোক মারাত্মক আহত হন। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে শত শত লোক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন নাগাসাকিতে। নাগাসাকি আক্রমণের ৬ দিন পর ১৫ আগস্ট মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনণ করতে বাধ্য হয় জাপান।

 

হিরোশিমা

তখন

পারমাণবিক বোমা লিটল বয় ছোড়ার পর পাইলট অপেক্ষা করছিলেন বোমার ভয়াবহতা দেখার জন্য। মুহূর্তে আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেল গোটা শহর। বোমা বিস্ফোরণের পর শহরজুড়ে তৈরি হয় নীল, সাদা রঙের আলো। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুতে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে যা যা ছিল সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ পুড়ে মিশে গেল মাটির সঙ্গে। যারা কিছুটা দূরে ছিলেন তাদের কারও শরীরের মাংস উঠে গেল। কারও হাত-পা উড়ে গেল। কারও চোখ অন্ধ হয়ে গেল। সবাই মিজু মিজু বা পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগল। বোমার আগুনের তাপে মানুষের শরীর পানিশূন্য হয়ে গেল। ৪৮ হাজার বড় বড় বাড়ি পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। মাটির নিচের আলু পর্যন্ত পুড়ে সিদ্ধ হয়ে গেল। হিচিয়ামা নামক নদীর পানি হয়ে গেল গরম। এমনই ভয়াবহ ছিল সেই অ্যাটম  বোমা। এই বোমার আঘাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। আর আহত ২ লাখ মানুষ চিরদিনের জন্য হয়ে গিয়েছিল পঙ্গু।

 

এখন

হিরোশিমার বাতাসে এখনো মেলে তেজস্ক্রিয়তা। পারমাণবিক হামলার বিপর্যয় খুব ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে শহরটি। যদিও এখানকার বাসিন্দারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই বোমা হামলার বিপর্যয়ের কথা ভুলবে না। শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিচিহ্ন। হিরোশিমায় যেখানে বোমাটি পড়েছিল সেখানে গড়ে উঠেছে স্মৃতিস্তম্ভ। হিরোশিমা শান্তি স্মৃতি জাদুঘর ১৯৫৫ সালে নির্মাণ হয়। হিরোশিমা ১৯৪৯ সালে জাপানি পার্লামেন্ট দ্বারা শান্তির শহর ঘোষিত হয়। হিরোশিমা উপসাগরকে ঝিনুকের আঁধার বলা হয় এখন। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় এ শহর এখন হয়ে উঠেছে শান্তি আর উন্নয়নের নগরী। একটি বিধ্বস্ত দেশ কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার উদাহরণ এই শহরটি। সারা বছরই লাখ লাখ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। পারমাণবিক হামলার পর পুরো শহর জ্বলে গিয়েছিল। সেই কথা ভুলতে এখন পুরো শহরে শুধু সবুজ গাছ আর ছায়া। পরিষ্কার বিস্তৃত রাস্তা ও আকাশচুম্বি দালান যেন ভুলে থাকতে চায় সেই ভয়াবহতা।

 

নাগাসাকি

তখন

জাপানের কিউশো দ্বীপের এক শহর নাগাসাকি। ১৬ শতকে পর্তুগিজ নাবিকরা জাপানি মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এ দ্বীপে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে করুণ পরিণতি ভোগ করে শহরটি। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট সকাল ১১টা ২ মিনিটে মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি বিমান থেকে ফ্যাটম্যান নামের পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। কিছু বাড়ি উড়ে যায়, কিছু বাড়ি পুড়ে যায়। পর দিন শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে এখানে মানুষ বসবাস করতে পারে। ধারণা করা হয়, প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ তখনই মারা যায়। বোমাটি মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে বিস্ফোরিত হয়। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের মাথার চুল পর্যন্ত উঠে যায়। শিশুরা খাওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলে আর বোমার আঘাতে আহতরা দীর্ঘদিন কষ্ট ভুগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছে যায়।

 

এখন

পারমাণবিক বোমায় নাগাসাকি মারা যায়Ñ এ সহজ বাক্যটি বলে দেয় সেই বোমার ভয়াবহতা কেমন ছিল। মৃত মানুষের শহর না হয়ে নাগাসাকি হয়ে ওঠে মৃত শহর। মানুষ যারা বেঁচে ছিলেন তারা শহর ছেড়ে  চলে যান অন্যত্র। তেজস্ক্রিয়তার কারণে বন্য পশু-পাখিরাও স্বাভাবিক জীবনে স্থির হতে পারেনি। কিন্তু এত বছর পরের দৃশ্য দেখলে যে কেউ অবাক না হয়ে পারবে না। নাগাসাকি বদলে গেছে। ক্ষতচিহ্ন পুরোপুরি না সারলেও শহরটি দেখে বোঝা যায়, অর্ধ শতক আগে কী ভয়াবহতার ভিতর দিয়ে গেছে শহরটি।

জাপানের অবকাঠামো উন্নয়নের চমকপ্রদ উদাহরণ নাগাসাকি। প্রতিটি দালান রং করা। আকাশচুম্বি দালানের সারিও দেখা যায় এখন। শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে ছুটছে নানা জলযান। মানুষজন শান্তভাবে হেঁটে ফিরছে যে যার মতো। অফিস, রেস্টুরেন্ট, স্কুল-কলেজ সবই চলছে আপন গতিতে। নগরের গতির সঙ্গে চোখ জুড়ানো আলোকসজ্জা দেখা যায় রাতে। গাড়িতে রাজপথ ঠাসা থাকে অফিস সময়ে।

 

অ্যাটমিক বম্ব ডোম

হিরোশিমা আর নাগাসাকির সেই ভয়াল বিস্ফোরণের পরও গোলাকার স্তম্ভের একটা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে থাকল। তখন অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। গোলাকার স্তম্ভের বিল্ডিংটার নাম অ্যাটমিক বম্ব ডোম। অ্যাটমিক বম্ব ডোম আসলে একটা নামকরা প্রেক্ষাগৃহ ছিল। যার চূড়ায় ক্ষেপণ করা হয়েছিল বিশ্ব মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমা। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সোমবারের সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে। মাইলের পর মাইল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলেও এ প্রেক্ষাগৃহের কাঠামোটি কোনোরকমে টিকে থাকে। কারণ, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ কেন্দ্র থেকে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে, মূল কেন্দ্রটিকে তুলনামূলকভাবে অক্ষত রেখে।

 

হিবাকুসা!

তেজস্ক্রিয়তায় ঝলসে যাওয়া মানুষের জীবন...

হিবাকুসা। খাঁটি জাপানি শব্দ। অর্থাৎ বিস্ফোরণ আক্রান্ত মানুষজন। যন্ত্রণা আর চোখের জলই যাদের একমাত্র অবলম্বন। মার্কিনি বর্বরতার নৃশংসতম ক্ষতচিহ্ন বহন করছেন ‘হিবাকুসা’রা হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার সময় থেকে পরবর্তী বংশ পরম্পরায়। কারা এই ‘হিবাকুসা?’ সংজ্ঞা নির্ধারিত ‘দ্য অ্যাটমিক বোম্ব সারভাইভারস রিলিফ’ আইনে। যারা বোমা বিস্ফোরণস্থলের সামান্য কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ছিলেন। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা বিস্ফোরণস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ছিলেন। যারা বিস্ফোরণ নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্তÑ এই তিন অবস্থার মধ্যে থাকা গর্ভবতী মহিলারা। জাপানে এরাই আইনমতে হিবাকুসা। মার্চ ২০০৫ সালে এরা সংখ্যায় ছিলেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৮। এদের বড় অংশই জাপানের। কয়েক হাজার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কোরিয়া ও তার আশপাশে। তথ্য জাপান সরকারের। হিবাকুসারা পেয়ে থাকেন সরকারি সহায়তা। অনুদান হিসেবে কিছু অর্থ দেওয়া হয় প্রতি মাসে। প্রতি বছর বিস্ফোরণের বার্ষিকীতে স্মরণ করা হয় নিহতদের। প্রতি বছর বিগত বছরে নিহত ‘হিবাকুসা’দের নাম লিখে দেওয়া হয় হিরোশিমা-নাগাসকির বুকে। মার্কিনি বোমার তেজস্ক্রিয়তায় ঝলসে যাওয়া নিহতদের স্মৃতিফলকে। দীর্ঘ হয়ে ওঠা এই তালিকা হিবাকুসাদের মতোই বহন করে চলেছে মার্কিনি ‘সভ্যতা’র কুৎসিত ক্ষতচিহ্ন। উল্লেখ্য, আগস্ট ২০০৫-এ হিরোশিমায় নিহত হিবাকুসাদের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৩৭ এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৯।

হিবাকুসাদের জবানবন্দিতে এভাবেই উঠে এসেছে হিরোশিমায় মার্কিনি নারকীয় পরমাণু বিস্ফোরণের সে দিনের কথা। হিবাকুসাদের এই নিদারুণ জীবন-যন্ত্রণা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ-ধিক্কার ঘৃণায় পরিণত হয়ে চিরদিন দংশন করে চলবে মার্কিন বিবেককে।

 

পশু-পাখি এলাকা ছেড়ে পালায়, বাতাসে এখনো তেজস্ক্রিয়তা

হিরোশিমা, নাগাসাকিতে এখনো বন্য পশু-পাখি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। বেশিরভাগ অঞ্চলে বন্যপ্রাণীরা ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে। ঘর বানালেও এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতির প্রভাব পাওয়া যায় তাদের শরীরে। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিকভাবেও অসুস্থতার প্রমাণ মিলেছে। গাছও বেড়ে উঠতে পারছে না স্বাভাবিকভাবে। তাই হিরোশিমা ও নাগাসাকির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। দীর্ঘ তেজস্ক্রিয়তার রেশ থেকে যাওয়ায় এ অঞ্চলের বাতাস ও মাটি সুস্থ জীবন ধারণের শতভাগ উপযোগী নয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের মাঝেও তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতা রয়ে গেছে। একবার যেসব পাখি এখান থেকে বেড়িয়ে গেছে তারা দ্বিতীয়বার আসছে না। মানুষজনও থাকে আতঙ্কে। তেজস্ক্রিয়তা থেকে ক্যান্সার ঝুঁকি থাকায় দীর্ঘ সময় এ অঞ্চলে কেউ থাকতে চায় না।

সর্বশেষ খবর