চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ৮৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই পেয়েছে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তরা। পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা পেয়েছেন লাইসেন্স করা অস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে একনলা বন্দুক, দোনলা বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল, শটগান, রিভলবার ও এনপিবি পিস্তল। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আমলে ইস্যু করা অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রগুলো জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সময়ে জেলা ও নগরে মোট ৮৪১ আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ৭১৭টি। এখনো জমা পড়েনি ১২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী। তার নামে লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতেন অবৈধভাবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা ও কাউন্সিলরের প্রভাব খাটিয়ে নিয়েছেন অস্ত্রের লাইসেন্স। অন্যের জমি দখল থেকে শুরু করে ভোট ডাকাতিতে অস্ত্রটি ব্যবহৃত হতো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুরো এলাকায় কাউন্সিলর মোবারকের ভয়ে তটস্থ ছিলেন এলাকার লোকজন। কথায় কথায় লোকজনের ওপর হামলার কারণে আলোচিত এ কাউন্সিলরের নামে অস্ত্রটি জমা দেওয়া হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। একই চিত্র বেশির ভাগ লাইসেন্স করা অস্ত্রের ক্ষেত্রেও। অনেক বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধেসহ নানা অবৈধ কাজে।
জেলা প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখায় এক কর্মকর্তা জানান, অনেক ভিআইপি চট্টগ্রামে না থাকার কারণে তাদের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন থানায় জমা দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। জেলা ও নগরে যেসব থানায় অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে তার তথ্য রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের বাইরে যেসব থানায় আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে তার তালিকা আমরা এখনো পায়নি। আশা করি আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাব।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানায় মোট ৪৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু হয়। তার মধ্যে কোতোয়ালিতে ৭৯টি, বাকলিয়ায় পাঁচটি, সদরঘাটে ২৬টি, চকবাজারে ৩৫টি, চান্দগাঁওতে ২৪টি, পাঁচলাইশে ৬০টি, খুলশীতে ৯৩টি, বায়েজিদে ৩২টি, ডবলমুরিংয়ে ৩৫টি, হালিশহরে ২১টি, পাহাড়তলীতে ১২টি, আকবরশাহে তিনটি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে সাতটি, পতেঙ্গায় তিনটি এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় সাতটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৭৯টি অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে কোতোয়ালি থানা এলাকায়। ১৬ থানা এলাকার জমা পড়া লাইসেন্স করা অস্ত্রের মধ্যে কোতোয়ালিতে ৫৩টি, বাকলিয়ায় পাঁচটি, সদরঘাটে ২১টি, চকবাজারে ৩১টি, চান্দগাঁওয়ে ২৫টি, পাঁচলাইশে ৯৫টি, খুলশীতে ৭০টি, বায়েজিদ বোস্তামিতে আটটি, ডবলমুরিংয়ে ১৯টি, হালিশহরে ১৭টি, পাহাড়তলীতে ৯টি, আকবরশাহতে ২টি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে সাতটি, পতেঙ্গায় তিনটি এবং কর্ণফুলী থানায় সাতটিসহ এসব থানায় মোট ৩৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে খুলশী থানায় অন্যান্য জেলার ২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র রয়েছে। নোয়াখালী জেলার লাইসেন্সপ্রাপ্ত দুটি অস্ত্র জমা হয়েছে ডবলমুরিং থানায়। পাহাড়তলী থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানায় এবং আরেকটি সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় জমা আছে। আকবরশাহ থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র সীতাকুন্ড থানায় এবং সীতাকুন্ড থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র আকবরশাহ থানায় জমা হয়েছে। কর্ণফুলী থানার দুটি অস্ত্র ডবলমুরিং থানায় ও একটি অস্ত্র খুলশী থানায় জমা হয়েছে। এদিকে জেলার ১৫ থানায় মোট ২৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এসব থানা এলাকায় ইস্যু হওয়া ২৭৮টি অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ২৪০টি অস্ত্র। অর্থাৎ বেঁধে দেওয়া সময়েও জমা পড়েনি ৩৮টি অস্ত্র।