চট্টগ্রামে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৮ ভাগ রোগীর মধ্যেই পাওয়া গেছে ডেন-২ প্রকরণের ডেঙ্গু ভাইরাস। ১১ ভাগ রোগীর মধ্যে পাওয়া গেছে ‘ডেন-৩’ প্রকরণ। তা ছাড়া গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সে ৫০ ভাগ রোগীর মধ্যেই বিপজ্জনক কসমোপলিটন প্রকরণ পাওয়া যায়; যা রোগের তীব্রতা ও জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টের কারণে চট্টগ্রামে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার ঊর্ধ্বগতি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে চলমান গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। ২০২৩ সালের জুন থেকে নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এসপেরিয়া হেলথকেয়ার এবং ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও এসপেরিয়া হেলথকেয়ারে আসা ১ হাজার ৫০০ রোগীর ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআরবি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৯ ভাগ রোগীই ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু এ বছর ৮৮ ভাগ রোগী ডেন-২-তে আক্রান্ত। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল পুরুষ, ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একজন ছিল শিশু। গবেষণায় চট্টগ্রামের পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও বায়েজিদ বোস্তামী। চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল এ পাঁচ এলাকায়। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকু , হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে।
চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান বলেন, ‘চট্টগ্রামে পাওয়া কসমোপলিটন লিনিয়েজ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। দেশের অন্য সব অঞ্চল থেকে পাওয়া ইতঃপূর্বের প্রকরণগুলো থেকে চট্টগ্রামে পাওয়া প্রকরণটি উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। ফাইলোজেনেটিক বিন্যাস তথা তুলনামূলক বিশ্লেষণে পাওয়া এ প্রকরণগুলো মিয়ানমার এবং ভারতে প্রবাহিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, পর্যটক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে এ বিপজ্জনক প্রকরণটি দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এ প্রকরণ ডেঙ্গুর তীব্রতা ও মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়। এ জিনোম সিকোয়েন্সগুলো জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি)-এ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া গবেষণার দুটি গবেষণাপত্র ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি এবং আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে গৃহীত হয়েছে।’ আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম অঞ্চলের এ গবেষণা দলে আছেন চমেকের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার ও ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী, চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. মো. আবদুর রব। গবেষণায় বলা হয়, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান ও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য জিনোম সিকোয়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য গুরুত্বসহকারে সরকার গ্রহণ করলে তা পরবর্তী বছরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।