সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আ জ ম নাছিরের এক বছরের সাতকাহন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আ জ ম নাছিরের এক বছরের সাতকাহন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরে দৃশ্যমান সাফল্য জঞ্জালে ভরপুর বিলবোর্ড উচ্ছেদ। কিন্তু এ সাফল্য গিলে খাচ্ছে যত্রতত্র আবর্জনা, বেহাল সড়ক ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা। ফলে দীর্ঘদিনের গেড়ে বসা বিলবোর্ড উচ্ছেদে যে দৃশ্যমান সাফল্য ও প্রশংসা অর্জিত হয়েছে, তা ম্লান করে দিচ্ছে এ তিন নাগরিক সমস্যা। তবে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলছেন, এসব দীর্ঘমেয়াদি ও উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্যা। এগুলো নিরসন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমকে পরাজিত করেন। গত বছর ২৬ জুলাই নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। উল্লেখ্য, চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযানে নামে চসিক। চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রাতের বেলায়ও চলে অভিযান। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা অভিযানে চার হাজার ৯৫৯ ছোটবড় বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে বেলসাইন ১ হাজার ৭৯৭টি, ইউনিপোল ১ হাজার ৩২৭টি, মিনি ইউনিপোল ৯৩৭টি, বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড ৫১৯টি, মেগাসাইন ৩৩১টি, ওভারহেড ৩০টি, ট্রাফিক ক্যানোপি ১৩টি ও রাউন্ড এবাউন্ট চারটি। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নগরে ফিরে আসে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। কিন্তু এ সৌন্দর্যের সুফল ম্লান হচ্ছে জলাবদ্ধতা, আবর্জনা ও বেহাল সড়কে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনির্বাচিত মেয়র গ্রিন ও ক্লিন সিটি নির্মাণে পরিচ্ছন্নতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। প্রাথমিক পদক্ষেপে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে দিনের পরিবর্তে রাতের বেলায় বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। বলা হয়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে ডাস্টবিন-কনটেইনারে ময়লা ফেলতে হবে। ১১টার পর চসিক ময়লা অপসারণ করবে। প্রথম দিকে এ কার্যক্রমে কিছুটা সুফল মিললেও ক্রমে ভাটা পড়ে। বর্তমানে নগরীর বেশির ভাগ এলাকার ডাস্টবিনে পড়ে থাকে আবর্জনা। ফলে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পথ চলতে হয় পথচারীদের। মেয়র নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ক্লিন সিটি আমার স্বপ্ন। এ নিয়ে প্রথম ধাপে একটি উদ্যোগও গ্রহণ করি। কিন্তু এ কাজে নগরবাসীর আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। শতভাগ ক্লিন নগর গড়তে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, ‘তবু আমি আশাবাদী। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে নগরের পশ্চিম ষোলশহর, শুলকবহর, বাগমনিরাম, এনায়েত বাজার, উত্তর পাঠানটুলী, আলকরণ, গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড থেকে চসিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করবে। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে এ পদ্ধতিতে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। এ কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত সাত হাজার শ্রমিক, ১০ লাখ বিন, ২ লাখ রিকশাভ্যান প্রয়োজন হবে।’ অন্যদিকে জলাবদ্ধতা অতীতের মতো অবস্থায় এখনো। ১৬ জুলাই মাত্র ছয় মিলিমিটার বৃষ্টিতে নগরীর অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কোথাও হয় কোমরপানি, কোথাও হাঁটুসমান। জলাবদ্ধতা নিরসন বর্তমান মেয়রের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার থাকলেও এক বছরে এর আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। জলাবদ্ধতা এখনো নগরের প্রধান সমস্যা। চসিক সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর নিজস্ব অর্থায়নে জলাবদ্ধতা নিরসন খাতে ২১ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১১৬টি খাল ও শাখা খাল থেকে ১৭ হাজার ৯৩৬ ঘন মিটার আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন এবং ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ৮৮ হাজার ৯২০ জন শ্রমিক দিয়ে নালা-নর্দমা থেকে আবর্জনা-মাটি অপসারণ  করা হয়। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি বরাদ্দ মেলেনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত অর্থবছর প্রথমবারের মতো চসিক ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে। এর মধ্যে খাল, ছড়া, নর্দমা রক্ষণাবেক্ষণে ৪০ কোটি টাকা, খাল খননকাজে এক্স্যাভেটর, ট্রাক ও অন্যান্য উপকরণ ভাড়া ৫৪ কোটি টাকা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে ১০ কোটি টাকা, বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননে ১৪২ কোটি টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ২৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর বিপরীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর সরকারের কাছ থেকে বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা উত্তাধিকারসূত্রে পাই। এটি নিরসন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এর সুফল পাবেন নগরবাসী। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে নগরের খাল, নালা-নর্দমা পরিষ্কারে অতীতের চেয়ে বেশি মাটি ও আবর্জনা উত্তোলন করা হয়েছে।’ চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্ষায় নগরের অন্তত ১৫০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশের বেহাল দশা। এসব সড়কের এক দিকে সংস্কারের পর আরেক দিক নষ্ট হচ্ছে। গত এক বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৭০ কোটি ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮৫টি সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কার করা হয়। এ ছাড়া নিজস্ব ও জাইকার অর্থায়নেও সড়ক সংস্কার-সম্প্রসারণ করা হয়। নতুন করে ৮৪টি সড়কের ৬০ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করে কার্পেটিং করা হয়েছে। কংক্রিট সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে ২৭ কিলোমিটার। নগরবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের কাজের কারণে বছর না ঘুরতেই বেহাল হয়ে পড়ে সড়ক। বর্ষা এলেই এ সমস্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

সর্বশেষ খবর