পুলিশকে যারা দানব বানিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচার হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর এ ফোর্সগুলোকে যারা দানব বানিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা কত লোক মেরেছে। প্রতিটি ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে। এগুলো ন্যাশনাল ফোর্স (বাহিনী), কারও পারসোনাল (ব্যক্তিগত) ফোর্স নয়। গতকাল রাজধানীর পিলখানার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজিবি সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ আমাকে বলেছে এ ইউনিফর্ম পরে এক দিনও বের হতে চাই না। আমি বলেছি, এটার জন্য তো সময় লাগবে। যারা ছাত্র, কোটার আন্দোলনের মধ্যে ছিলেন তাদের বলছি, আপনারা ডিজাইন, ব্যাচ নিয়ে আসেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ইউনিফর্ম চেঞ্জ করতে চাই। পুলিশরা ভবিষ্যতে যেন মানবিক পুলিশ হয় সেজন্য আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছি। পুলিশ সদস্যরাও বলেছেন, পুলিশ কমিশনের অধীনে থাকতে চাই। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চাই না। পুলিশের যোগদান সম্পর্কে তিনি বলেন, পুলিশে সবাই যোগদান করছে। আগামী বৃহস্পতিবার বলতে পারব কজন আসছে, কজন আসেনি। ১৫ আগস্ট ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সেদিন প্রচুর পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কেউ যাতে কোনো ধরনের গন্ডগোল করতে না পারে। আমি ছাত্রদের উদ্দেশে বলব, তোমাদের আন্দোলন কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এ আন্দোলনের তো ইমেজ আছে। আর পুলিশ তো অনুতপ্ত। আমি তোমাদের কজনকে দাওয়াত করি, আমরা একসঙ্গে বসে পুলিশের সঙ্গে দুপুরে খাব।
অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা অস্ত্র ছিনতাই বা লুট করেছে তাদের অস্ত্র ফেরত দিতে বলেছি। যদি জমা না দিয়ে ধরা পড়েন তাহলে দুই রকমের শাস্তি পাবেন। নিষিদ্ধ অস্ত্র ছিনতাই ও নিষিদ্ধ অস্ত্র পাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। সুতরাং নিজেরা ভয়ে আসতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে জমা দেন। ১৫ আগস্ট নানা কর্মসূচির কথা শোনা যাচ্ছে। সেদিনের নিরাপত্তা সম্পর্কে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করব। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি থাকবে। হয়তো সেনাবাহিনীও থাকবে। দেশের সীমান্তে ঢুকে মানুষ মারলেও পতাকা বৈঠক করে বলা হতো সব ঠিক হয়ে গেছে-এ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। বিজিবির মতো একটা ফোর্সকে (বাহিনী) পিঠ দেখাতে বলেছে সীমান্তে। সীমান্তে আমাদের লোক মারে, বিজিবি পতাকা বৈঠক করতে বাধ্য হয়। আমি বলেছি যে পিঠ দেখাবেন না। এনাফ ইজ এনাফ (যথেষ্ট হয়েছে)। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সীমানার মধ্যে ঢুকে মারে, আর আমরা বলি, পতাকা বৈঠক করেছে, সব ঠিক হয়ে গেছে বা আমি জানি না। দ্যাট ডেজ আর ওভার। গত সোমবার নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অনেক কথার মধ্যে অনেক কথা চলে আসে। যদি আমি এমন কোনো কথা বলে থাকি, সেটা ভুল বুঝেছেন, সেটার জন্য আমি দুঃখিত। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আহত বিজিবি সদস্য এবং আন্দোলনে আহত হয়ে বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। আহতদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় বিজিবির তিনজন সদস্য নিহত (এর মধ্যে দুজন র্যাবে কর্মরত ছিলেন) এবং ১৩০ জন বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।