শিকাগোয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন গ্রহণ করে কমলা বলেছেন, আমেরিকানদের অতীতের তিক্ততা ভুলে, হতাশা মুছে এগোনোর সুযোগ এসেছে। তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্যে কমলা হ্যারিস বলেন, সব আমেরিকানের পক্ষ থেকে-দল, জাতি, লিঙ্গ, ভাষা নির্বিশেষে আমি আপনাদের মনোনয়ন গ্রহণ করছি। আমি জানি বহু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ এখানে আছে। তারা এ সম্মেলনে চোখ রেখেছে। আমি বলতে চাই, ‘আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি সেই প্রেসিডেন্ট হতে চাই যিনি সবাইকে একতাবদ্ধ করবেন, তাদের উচ্চাশা পূরণ করবেন, যিনি নেতৃত্ব দেবেন, সবার কথা শুনবেন, বাস্তববাদী হবেন, কার্যকরী হবেন।’ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নতুন পথে হাঁটার সুযোগ এসেছে। এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কমলা হ্যারিস তাঁর প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অবিবেচক মানুষ’ বলে বর্ণনা করে বলেন, ট্রাম্পকে হারানোটা জরুরি এবং অপরিহার্য। ট্রাম্প মার্কিন ভোটারদের রায় ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন এবং ব্যর্থ হলে একটি সশস্ত্র চরম উগ্রপন্থি জনতাকে ক্যাপিটলে পাঠিয়ে আইন প্রয়োগকারীদের ওপর হামলা চালান। তিনি বলেন, আইন ভঙ্গ করার ট্রাম্পের প্রবণতা এ ইঙ্গিতই দেয় যে, আবার নির্বাচিত হলে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বেপরোয়া হতে পারেন।
সব আমেরিকানের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হ্যারিস বলেছেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখার মতো একজন প্রেসিডেন্ট হতে চান তিনি।
গাজায় যুদ্ধের প্রসঙ্গে হ্যারিস বলেন, সেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার সময় এসেছে। বন্দিমুক্তি দেওয়াটাও জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে। কিন্তু গাজায় ১০ মাস ধরে যা হয়েছে তা বিপর্যয়কর। বহু নিরীহ মানুষ মরেছে। ক্ষুধার্ত, সাহায্যের জন্য মরিয়া মানুষকে বারবার এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গাজার মানুষদের এ দুর্ভোগ হৃদয়বিদারক। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং আমি এ যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছি, যাতে ইসরায়েল সুরক্ষিত থাকে এবং বন্দিরা মুক্তি পায়, গাজায় মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনিরা যাতে মর্যাদা, সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে।’
স্বৈরশাসকদের কাছে ট্রাম্পের মাথা নত করারও অভিযোগ করেছেন কমলা হ্যারিস। বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যে চলে আসা সংগ্রামে তাঁর অবস্থান কোথায় তা যেমন তিনি জানেন তেমন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায়, তা-ও তিনি জানেন। প্রেসিডেন্ট হলে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ইউক্রেনকেও সমর্থন দিয়েছেন হ্যারিস। বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনকে সমর্থন করে যেতে হবে। হ্যারিস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং মূল্যবোধ রক্ষা করতে আমি কখনো পিছপা হব না। ইরান এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করতেও দ্বিধা করব না।’
কমলা বলেন, মাঝারি আয়ের আমেরিকানরা ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই আমেরিকা ঘুরে দাঁড়াবে। এজন্য তিনি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের পরিবারের ট্যাক্স কর্তনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অঙ্গীকারও করেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প চাচ্ছেন তাঁর বিলিয়নেয়ার ক্লাবের স্বার্থে ট্যাক্সেশন ব্যবস্থা গড়তে। আর এর ফলে আমেরিকার জাতীয় দেনার দায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন কমলা। এবারের জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা ঐক্যবদ্ধ হলেন কমলার নেতৃত্বে এবং গোটা আমেরিকায়ও ঐক্যের জয়গান ধ্বনিত হচ্ছে ইতিহাস রচনার নির্বাচনে সবা আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার জন্য। কারণ এর আগে কখনোই প্রধান কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে পারেননি কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী। বারাক ওবামা যেমন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন, তেমন কমলাও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে যাচ্ছেন বলে আমেরিকানরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে প্রায় সব জরিপেও ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কমলা হ্যারিস।