প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক শোষণহীন সমাজ গঠন ও সমাজের সর্বস্তরে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বরিশাল নগরীর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী এ্যানেক্স ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, কোর্ট অফিসার হিসেবে আইনজীবীর প্রথম কর্তব্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালত ও আইনের বিধিবিধানের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।
আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আইন পেশায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আইন পেশার সাফল্যের শিখর পেতে প্রয়োজন একাগ্র, নিষ্ঠা, সততা, ধৈর্য ও পরিশ্রম।
তিনি বলেন, আইনজীবীর পড়ালেখার কোনো শেষ নেই। আইনের সর্বশেষ সংশোধন সম্পর্কে নিজেদের আপডেটেড রাখতে হবে। জ্ঞান ও কর্মের দ্বারা নিজের যদি অবস্থান তৈরি করতে পারেন, তবে সফলতা আপনাকে খুঁজে নেবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বার ও বেঞ্চ একত্রে বিচার বিভাগ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একে অন্যের পরিপূরক, প্রতিপক্ষ নয়।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম কবির বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন শেখা মানুষকে সহিষ্ণু হতে শেখায়। সম্মান করতে শেখায়। বিচার বিভাগের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে নিজেদের না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, একজন বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় একজন আইনজীবীর কাছে আসেন। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। বক্তব্যের শুরুতে প্রধান বিচারপ্রতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ জুলাই আগস্টের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, যাদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশের জন্ম নিয়েছে এদেশের মানুষ চিরকাল তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
বরিশাল আদালতের বিচার কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, বরিশাল আদালতে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৭ জন বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। কিছু কিছু আদালতের বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগের বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। পরিসংখ্যান অনুসারে এ বছর ৮ হাজার ৯২৪টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিপরীতে ৮ হাজর ৯৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, জন আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের পথে আমরা হাঁটছি শত বাধা সত্ত্বেও আস্থা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলছে।
বরিশাল জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রি কেস মামলায় ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪০ টাকা এবং পোস্ট কেইস মামলায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পক্ষকে আদায় করে দিয়েছেন। যা আশাব্যঞ্জক।
এ সময় বিচার বিভাগকে বিচার প্রার্থীর সময় ও খরচ দুটিই যাতে কমে সেভাবে সাজানোর কথা জানান তিনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম কবির বাদলের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আদালতের বিচারকসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।