তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নদীবেষ্টিত চারটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চরে। এদিকে ১৮ ঘণ্টায় তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭ সেন্টিমিটার। পানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্ভাবাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে পানি বাড়তে থাকে তিস্তা নদীতে। এর ফলে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থানে রয়েছে নদীর ডালিয়া পয়েন্ট।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ করে পানি বাড়তে থাকে তিস্তা নদীতে। এর ফলে নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ওই এলাকার মানুষ এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছে। তবে আরও পানি বাড়লে উঁচু স্থানে চলে আসার প্রস্তুতি নেবেন বাসিন্দারা। এলাকার ৬০০ পরিবার পানিবন্দি বলে জানান তিনি।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে অবস্থান তিস্তা নদীর। এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দি। গতকাল দুপুরে পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে। পানি বাড়লে নিরাপদ স্থানে সরে আসবেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি বাড়লেও বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা কম। বিপৎসীমা ৫২.১৫ সেন্টিমিটার হলেও গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫২.১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। আর দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উঠলেই এটিকে বিপদৎসীমার ওপরে ধরা হবে। তার পরও আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কোথাও কোনো প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, তিস্তার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।
কুড়িগ্রামে আবারও বন্যার পদধ্বনি : কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি গতকাল রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি দ্রুত বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সবকটি নদনদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বাড়লেও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বাড়ার কারণে নদী তীরবর্তী মানুষ বন্যার আশঙ্কা করছেন। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে ফসলহানির আশঙ্কা নদী পাড়ের মানুষের।