অধস্তন আদালতে বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা, খরচ কমানোসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে বেশি নজর দেবেন বলে জানিয়েছেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয়ে বেশি নজর দেব, অধস্তন আদালতে বিচারকাজে যাতে বিলম্ব না হয় আর বিচারকাজের খরচটা যেন কমে। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে একটু কথাবার্তা বলেছি। হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ-এটার একটা নীতি নির্ধারণ যদি সম্ভব হয়, আমরা করে দেব। (অর্র্থাৎ) আপনি (একজনকে) নিয়ে এলেন আমার চাচা, জজ করে দেন, এটা করব না। আমরা নীতিনির্ধারণী ঠিক করব। গাইডলাইনে পড়লে (নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা থাকলে) জজ হবেন, না হলে বাদ যাবেন। স্টেকহোল্ডারদের থেকে মতামত নেওয়ার বিষয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, মতামত নেব, তারপর সুপারিশ দেব। আমরা আজ একটা পেপার তৈরি করেছি। এটাতে একটা রূপরেখা আছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। তারপর গণমাধ্যমের সঙ্গে, নিচের কোর্টের স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে, জুডিশিয়ারি আছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আছে, জেলা আইনজীবী সমিতি আছে, ব্যবসায়ী সমিতি আছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সুপারিশ করে দেব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক্করণ নিয়ে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, বিচারের রায় কার্যকর করবে কে? সরকার। তাহলে আমরা ‘সেপারেশন’ কীভাবে হলাম? সরকার ছাড়া তো আমরা চলতে পারছি না। সুতরাং ‘অ্যাবসলিউট সেপারেশন’ আপনাদের একটা ভুল ধারণা। ‘অ্যাবসলিউট সেপারেশন’ হবে না। আমাদের (রাষ্ট্রের তিন বিভাগ) মিলেমিশে কাজ করতে হবে। অন্য যারা আছেন, ওনারা জুডিশিয়ারিকে যাতে সম্মান করেন। যে রায়টা দেওয়া হলো, সেটা কার্যকর না হলে ঈ লাভ হবে? ‘কমপ্লিট সেপারেশন’ জুডিশিয়ারি বলতে কিচ্ছু নেই। কোর্ট না থাকলে প্রশাসন চলতে পারবে না, দেশ চলতে পারবে না। দেশ চালাতে জুডিশিয়ারি থাকতে হবে, যার কথা সবাইকে শুনতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, সে কথা আরও কয়েক দিন পরে আলাপ-আলোচনা করব। আমরা চাইব যাতে হস্তক্ষেপ না হয়।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রধান করা হয় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে। কমিশনের সদস্যরা হলেন হাই কোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।