দিনাজপুরের ব্যস্ততম এলাকায় এখন নিরাপদ চড়ুই পাখির আবাস। এরা মানুষের আশপাশে বসবাস করতে ভালোবাসে। ভোর হতেই বেশিরভাগ পাখি চলে যায় আহারের সন্ধানে শহরের অন্যত্র কিংবা দূর-দূরান্তের কোনো এলাকায়। আবার বিকেল হলেই সেই সব চড়ুই পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসে নীড়ে। আর তখনই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সন্ধ্যায় পুরো এলাকা চড়ুই পাখির গুঞ্জনে মুখরিত করে। আর এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায় ব্যস্ততম দিনাজপুর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় কিচিরমিচির শব্দ পথিকসহ পাখি প্রেমিকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এখানে কেউ পাখি শিকার বা পাখিকে ঢিল ছুড়তে পারে না। যেহেতু মানুষের চলাচল বেশি তাই ঢিল ছোড়াও সম্ভব না। তাই গাছের পাতায় পাতায় ভরে থাকে অগণিত চড়ুই পাখি।
পরিবেশবান্ধব ও চঞ্চল প্রকৃতির হাজারো চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত ব্যস্ততম নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা। এখানে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার বাসসহ সকল প্রকার যানবাহন চলা ও সারাদিন মানুষের ওঠানামার কোলাহল থাকলেও নিরাপদ ভেবে থাকছে কিংবা উড়ছে এসব চড়ুই পাখির ঝাঁক। সকালে কিংবা বিকালের পর সন্ধ্যায় জনসমাগম কমার সময় কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে এসব পাখির ঝাঁক।
নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছোট ছোট কয়েকটি গাছের পাতায় পাতায়, বিভিন্ন সাইনবোর্ডের উপরে, কারেন্টের তারে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখির সারি। গাছে চড়ুই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে পড়ন্ত বিকেল। ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি পাতায় পাতায় বাসা বেঁধেছে।
পাখির ঝাঁকের কলরব আর কিচিরমিচিরে পথচারীসহ সবাইকে মুগ্ধ করে। সন্ধ্যা যত ঘনিয়ে আসে ততই পাখির আনাগোনা বাড়তে থাকে। নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকার এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। এখানে ছবি বা সেলফিও তোলেন অনেকে পাখি প্রেমীরা।
ফারুকসহ কয়েকজন পাখি প্রেমিক জানায়, চড়ুই পাখি বছরে একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবারে ৪-৬টি করে ডিম দেয়। এদের ছানা বেঁচে থাকে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করছে। আর চড়ুই প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বিচির পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে। বিশেষ করে পোকার শুককীট, মুককীট বা লেদাপোকা যারা শস্য উৎপাদনের অন্তরায়।
চড়ুই পাখি এসব পোকার ক্ষতিকর আক্রমণ থেকে ফসল, সবজির ক্ষেত, বনাঞ্চল বাঁচিয়ে পরিবেশ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে এসব খাবার খেয়ে তারাও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের সংখ্যা কমলেও ব্যতিক্রম দিনাজপুর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। চড়ুইয়ের যে কয়েকটি প্রজাতি দেখা যায়, তার মধ্যে সবার পরিচিত এ প্রজাতিটি দলবদ্ধ। প্রজননের পূর্বে তারা একত্রে ঝাঁক বেঁধে উড়ে এসে বসত গড়ে। আবার চলে যায় অন্যত্র।
নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, দিনে যখন পাখিগুলো থাকে না, তখন মনে হয় কি যেন নেই। বিকেলে যখন পাখিরা ফিরে কিচিরমিচির শব্দ শুরু করে তাদের মন মুগ্ধ করে।
তিনি আরও বলেন, পাখিগুলো ভোরে আজানের পরে আহারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। আবার তারা বিকালে ফিরে আসতে শুরু করে। তখন পুরো এলাকা গুঞ্জন-কলরবে মুখরিত করে তোলে। সন্ধ্যায় মাগরিবের পর নীরব হয়ে যায়। এরা আমাদের অতিথি। তাই এদের বিরক্ত বা ঢিল মারা নিষেধ করে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে পোস্টার মারা আছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই