মোর দুঃখ-কষ্টের কতা আর কী হুনবেন, স্যার? চাইর বছর আগে দুইড্যা সন্তান থুইয়্যা স্বামীডা মারা যায়। মোর স্বামী মাদারীপুর বিসিকের একটা সমিলে কাজ করত। দৈনিক যা আয় করত, তাই দিয়া কোনোমতে সংসার চলত। স্বামীর মৃত্যুর পরে চাইরদিকে ঘোর অন্ধকার নাইম্যা আসে।
সংসারে অভাব, ঘাড়ের উপর দুইডা পুলাপান। ওগো মুখের দিকে চাইয়্যা আর বিয়া করি নাই। শেষে বাধ্য হইয়্যা মাইনসের বাসায় বাসায় ঠিকা কাম কইর্যা দিন আনি, দিন খাই। এই কইর্যা চলতি থাকি।
এর মধ্যি একজনের কাছে হুনি বসুন্ধরার স্যারেরা অসহায় মহিলাগো টেরনিং দিয়্যা সেলাই মেশিন দিবে। মুই (আমি) একখান ছবি আর ভোটের পরিচয়পত্র নিয়্যা জমা দিয়্যা টেরনিং দিতে থাকি। এক বেলা টেরনিং দিয়্যা, আরেক বেলা কাম কইর্যা কোনোমতে সংসার চালাতে থাহি। এর আগে কতজনে কইছে তোরে একটা সেলাই মেশিন দিব, কিন্তু আইজ-কাইল করতে করতে বছর হইয়্যা গেছে।
কেউ দেয় নাই। এলাকার বড়লোকের বাড়িও গেছি। তারা কইছে জুয়ান বিটি, মাইনসের বাড়ি কাজ কইরা খাইতে পারোস না? বসুন্ধরার স্যারেরা আমাগো অনেক মহিলারে টেরনিং করাইছে। শ্যাষে আইজ আমারে একটা মেশিনও দিল। কোনো টাহা-পয়সা লাগল না।
পয়লা পয়লা বিশ্বাসই করতি পারি নাই। যহন টেরনিং দেই, তহন বুঝতে পারলাম হাচা হাচাই মেশিন দিব। পাঁচ মাস টেরনিং দিবার পরে আইজ টাহা-পয়সা ছাড়াই একটা দামি মেশিন পাইলাম। এ্যাতে আমার কপালই ফিরা গেল। ভাবছি আমার ঘরের লগে একটা দুহান দিমু। আর নাইলে বাড়ি বইয়্যা মাইনসেগো জামাকাপুড় বানাইয়্যাও কয়ডা টাহা কামাইতে পারুম।
