দেশব্যাপী কোডিভ-১৯ মহামারির কারণে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকায় সীমিত পরিসরে পালন করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির শুরুতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনভবন চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা এবং প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্ববায়কের প্রতিনিধি হিসেবে নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. একরাম হোসেন নিজ হলের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বর্ণিল বেলুন-ফেস্টুন উড়ানো হয়।
এসময় সেখানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপাচার্য আইবিএ চত্বরের আম বাগানে একটি আম গাছের চারা রোপণ করেন।
এরপর বেলা ১১টায় অনলাইনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ প্রচার করা হয়। রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী এম জাকারিয়া।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাশ হয়। গভর্নরের অনুমোদনের পর ১৯৫৩ সালের ১৬ জুন ঢাকা গেজেটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তথ্যটি প্রকাশিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের কার্যক্রম শুরুর জন্য সরকার প্রফেসর ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে একই বছরের ৬ জুলাই উপাচার্য নিয়োগ করেন। পদ্মার তীরবর্তী ওলন্দাজ বাণিজ্য কেন্দ্র ‘বড়কুঠি’-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৫৪ সালে পাঁচজন ছাত্রী ও ১৫৬ জন ছাত্র নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক যাত্রা শুরু করে। শুরুতে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৬৪ সালের মধ্যে বর্তমান মতিহার ক্যাম্পাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি অনুষদ। জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ সম্প্রতি ২টি অনুষদে বিভক্ত হয়েছে।
মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি এবং চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান নিয়ে গঠিত হয়েছে ফ্যাকাল্টি অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ নিয়ে গঠিত হয়েছে ফ্যাকাল্টি অব জিও সায়েন্সেস। গত ২৭.০৬.২০২০ তারিখে সিন্ডিকেট সভায় আরও ২টি অনুষদ অনুমোদিত হয়েছে। কৃষি অনুষদ থেকে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস এবং ফিশারীজ অনুষদ সৃষ্টি হয়েছে। ৬টি ইনস্টিটিউটসহ মোট ৫৮টি বিভাগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ইনস্টিটিউট জ্ঞানের বিচিত্র শাখায় উচ্চতর গবেষণা ও পরিচর্যার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি ইনস্টিটিউট শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হচ্ছে: ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (১৯৭৪), ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (১৯৮৯), ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (২০০০), ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (২০০০), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (২০০০) এবং ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (২০১৫)। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল এবং সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং: এই প্রতিষ্ঠান দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংযুক্তের সংখ্যা
শিক্ষক-১২২১ জন (প্রফেসর ৬০৪, সহযোগী ২৯৭, সহকারী ২৩০, প্রভাষক ৯০ জন), অফিসার-৮০৫ জন, সহায়ক কর্মচারী-৭১৪ জন, সাধারণ কর্মচারী-১২২৯ জন এবং শিক্ষার্থী-৩৮,৩০০ জন ও বিদেশী শিক্ষার্থী-৫৮ জন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই