কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকারের ২২ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঝড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে তার নিজের গ্রাম শান্তিডাঙ্গায় দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে তার উপর হামলার পেছনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের অভিযোগ ঝড়ার কাছ থকে দেড় লক্ষ টাকা ধার নেন রাশেদ। পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি এক লক্ষটাকা পরিশোধ করতে তালবাহানা শুরু করে। পাওনা টাকা আদায় করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে রাশেদ। এমনটি উল্লেখ রয়েছে মেয়ের মা বাদী লিপি খাতুনের দায়ের করা এজহারেও।
গত ১১ জুন ঝড়ার উপর হামলার পর রাশেদ, ইবি কর্মচারী বিপুল আহমেদসহ ৫জনের নাম উল্লেখ করে কুষ্টিয়া থানায় এজহার দিয়েছিলেন ঝড়ার মা লিপি খাতুন। এজহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হলেও এখনো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের।
এজাহার ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার হাউজিং ডি ব্লকে ৪৫৬নং ভবনের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা ও মামলার এজাহারকারী লিপি খাতুন তার বিধবা কন্যা আয়শা সিদ্দিকা ঝড়াকে নিয়ে বসবাস করতেন ওই বাসাতে। ঘটনার (১১ জুন) দিন রাত আটটার দিকে তাদের পাওনা টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে জড়িতরা শহরের পুনাক ফুড পার্কে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর রাশেদ, ইবির কর্মচারী বিপুল আহমেদ কুষ্টিয়ার যুবলীগের কয়েকজন নেতাসহ ৫-৬ জন সেখানে উপস্থিত দেখতে পায় তারা।
পূর্ব কথামতো রাশেদ পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং ঝড়ার সঙ্গে ঝগড়া, তর্কাতর্কি ও কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। রাত এগারটার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে বিপুল আহমেদের একটি সাদা রংয়ের কারে করে বাসার উদ্দেশে ফেরে ঝড়া ও তার মা লিপি খাতুন। বাসার সামনে পৌঁছা মাত্রই ৪ জন লোক ঝড়াকে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। ঝড়ার মা লিপি খাতুনের চিৎকার শুনে সেখানে থাকা উপস্থিত লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় ঝড়কে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করানো হয়।
তার পিছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই পায়ের লিগামেন্টসহ রক্ত নালী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তার। নিহত ঝড়ার মা লিপি খাতুন জানান, সেদিন রাশেদ, বিপুলের যোগসাজশেই আমার মেয়ের উপর হামলা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার উপর অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনো সত্যতা নেই। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি পক্ষ আমার বিরূদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।’
নিহতের মা বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ হত্যার চেষ্টার অভিযোগে করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি সাব্বিরুল ইসলাম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক তাপস কুমার পাল সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত শুরু করেছি, কিছু প্রাসঙ্গিক আলামতসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলি বিশ্লেষন ও পর্যালোচনা চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই জড়িদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল