বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় হামলার পর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। দুই দফা হামলায় ২০ জন আহত হয়েছে বলে ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আকরাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনসহ ২২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’ ব্যানারে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনটি মূলত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা পরিচালনা করেন।
কর্মসূচির শুরুতেই ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের পরিচয় এবং বহিরাগত আছে কিনা জানতে চায়। এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডার তৈরি হয়। পরে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীনসহ কয়েকজনের সাথে ছাত্র অধিকারের নেতাকর্মীদের মারামারি শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের লাঠি-সোটা ও লোহার পাইপ দিয়ে পেটাতে শুরু করে। পরে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনের নেতৃত্বে পরিষদের নেতাকর্মীদের শাহবাগমুখী রাস্তায় ধাওয়া দেওয়া হয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বিনিময় হয়।
হামলার সময় কর্মসূচির মাইক বহনকারী এক রিকশাওয়ালাকেও মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এছাড়াও বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর ও কর্মসূচির ব্যানারে আগুন দেয় ছাত্রলীগ।
এদিকে, আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। এ সময় পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ অন্যরা আহতদের হাসপাতালে গেলে সেখানে তাদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ১৫-১৬ জনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজু ভাস্কর্যে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে আয়োজিত স্মরণ সভায় ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ১০-১৫ নেতাকর্মী আহত হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করায়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানেও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হোন। ছাত্রলীগ আমাদের আটকে রাখলে পুলিশ এসে আমাদের ঢাবি শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ১৫ জনকে শাহবাগ থানা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ৭ জন গুরুতর সহ মোট ২৪ জন আহত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, আবরার স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংগঠনের আড়ালে তারা শিবিরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রোগ্রাম করছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে গেলে তারা উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্র ছিল। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের অনেককেই আটক করেছে।
বিষয়টি নিয়ে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ যদি কোন অভিযোগ দেয় তাহলে মামলা দায়ের হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন