২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২১:১৬

পুলিশে চাকরি পেয়ে চোখেমুখে বিজয়ের হাসি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পুলিশে চাকরি পেয়ে চোখেমুখে বিজয়ের হাসি

অদম্য স্বপ্ন ছিলো তাদের। ছিলো দেশসেবার দৃঢ় প্রত্যয়। সেই প্রত্যয় আর স্বপ্ন তাদেরকে প্রায় ৪ হাজার প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে আরোহন করিয়েছে বিজয়শৃঙ্গে। চোখে-মুখে এনে দিয়েছে সাফল্যের সোনালী হাসি।

সিলেট জেলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে ১৩১ জনের। ‘যোগ্যতা যার চাকরি তার’ স্লোগান নিয়ে টানা ৩ দিন জেলা পুলিশ লাইন্সে ‘ট্রেইনিং রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি)’ পদে নিয়োগের জন্য তরুণ-তরুণীদের শারীরিক যোগ্যতা যাচাই করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত সোমবার রাতে ১৩১ জন স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। যাদের মধ্যে ১১১ জন পুরুষ এবং ২০ জন নারী। তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কারো বাবা রাজমিস্ত্রি, কারো বাবা বাকপ্রতিবন্ধী, আবার কারো বাবা দিনমজুর। সোমবার রাতে চূড়ান্ত বাছাই শেষে তাদের নাম ঘোষণা করলে অনেকেরই চোখে গড়ায় আনন্দ অশ্রু। প্রায় সবাই হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে অনলাইনে আবেদন করে নিজেদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে তারা যুক্ত হতে যাচ্ছেন পুলিশ বাহিনীতে।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, এবার পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সিলেটে অনলাইনে আবেদনকৃতদের মধ্য থেকে ৩ হাজার ৯৫৭ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে ‘ফিজিক্যাল এন্ডোরেন্স টেস্ট’র জন্য মাঠে আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫১২ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি এ তিন দিন বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়ায় জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে অনুষ্ঠিত শারিরীক সক্ষমতা পরীক্ষায় ৮০১ জন প্রার্থী নির্বাচিত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় তাদের লিখিত পরীক্ষা। গত সোমবার লিখিত পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। এতে উর্ত্তীণ হন ২৬৬ জন। একই দিন উর্ত্তীণদের নেয়া হয় মৌখিক পরীক্ষা। নিয়োগ কমিটি সাক্ষাতকার গ্রহণের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হন ১৩১ জন প্রতিযোগী। ফলাফল ঘোষণার সময় অনেকেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন, হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত। এসময় সঙ্গে থাকা অভিভাবকদের গলা জড়িয়ে অনেকক্ষণ কাঁদেন তারা।  

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, উত্তীর্ণ ১৩১ জনের মাঝে একজন তাজরিয়ান আহমেদ। তার বাবা বাকপ্রতিবন্ধী। সন্তানের সাফল্যে বাবার মুখেও যেন ফুটছিল কথা। পুলিশ বাহিনীতে সুযোগ পাওয়ার বার্তা পেয়েই তাজরিনের চোখে-মুখে ফোটে দেশসেবার শপথরেখা। তিনি বলেন- ‘এখন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। পাশাপাশি হাল ধরবো পরিবারের।’

চূড়ান্ত বছাইকৃতদের মাঝে আরেকজন শাহিনা আক্তার। বাড়ি সিলেটে জৈন্তাপুর উপজেলার খারুবিল গ্রামে। বাবা আব্দুস সামাদ রাজমিস্ত্রী। পুলিশ সুপারের মুখে নিজের নাম শোনার পরই বাবার গলা জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাঁদেন শাহিনা। কথা হলে তিনি জানান, নারী হয়েও বিভিন্ন ধাপের শারীরিক পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন- এটাই তার জন্য অনেক বড় বিজয়। এবার দেশসেবায় নিয়োজিত হতে চান।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কোনো দালাল চক্র যাতে কোনো ধরণের অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সেজন্য আমরা ব্যাপক প্রচারণাও চালিয়েছিলাম। তাই দালালদের হাতে কেউ প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। 

তিনি বলেন, আশা করি নিয়োগপ্রাপ্তরা আগামীতে দেশসেবা ও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিবেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর