২০ অক্টোবর, ২০১৯ ২০:৪৩

চট্টগ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হলেন বাবা-মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হলেন বাবা-মেয়ে

পরকীয়ার কারণে বন্দর থানা নিমতলায় বাবা-মেয়েকে খুন হতে হলো স্ত্রী ও তার কথিত প্রেমিকের হাতে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম।

ঘটনার বিবরণে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাশের বাসার মাঈন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মায়ের অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলে শিশু কন্যা ফাতেমা খাতুন (৪)। বাবা বাসায় এলে এ সম্পর্কের কথা বলে দেবে বললে ওই শিশুকে হত্যা করে মা হাছিনা বেগম। পরে পরকীয়া প্রেমিক মাঈন উদ্দিন ও হাছিনা বেগম মিলে স্বামী আবু তাহেরকেও হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, শনিবার বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকায় স্থানীয় বুচুইক্যা কলোনির একটি বাসা থেকে বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম বলেন, এ ঘটনার পর পালিয়ে থাকা মাঈন উদ্দিনকে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়। যার সঙ্গে নিহত আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। শনিবার সকালে আবু তাহের কাজে বের হলে তার স্ত্রী হাছিনা অবৈধ সম্পর্কে জড়ায় মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে। এ ঘটনা শিশু কন্যা দেখে ফেললে মাইন উদ্দিন ওই শিশুকে হাত-পা চেপে ধরে, আর হাছিনা গলায় ছুরি বসিয়ে নিজ কন্যাকে হত্যা করে। পরে আবু তাহের বাড়িতে এলে মাঈন উদ্দিন ও হাছিনা বেগম তাকে জাপটে ধরে। গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাত করে তাকেও হত্যা করে।

এ ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের বড় ভাই মো. নুর আলম বাদি হয়ে বন্দর থানায় হত্যা মামলা করেন। আবু তাহের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন চরঘাটা গ্রামের মৃত মো. মোস্তফার ছেলে।

হাছিনার দেওয়া তথ্যে তার কথিত প্রেমিক মাঈন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের ভাই নুরুল আলম বাদি হয়ে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও প্রতিবেশী মাঈন উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. কামরুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধারের পর গলায় ছুরিকাঘাতের দাগ ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধারে প্রথম থেকেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে নিয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তাই স্ত্রী হাছিনা আক্তারসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হাছিনা আক্তার একেক সময় একেরকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের আরো সন্দেহ হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরকীয়াকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। এছাড়া স্ত্রী হাছিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে খুনের দিন এবং এর দুইদিন আগ পর্যন্ত কাদের সঙ্গে বেশি কথা হয়েছে তা চিহ্ণিত করে খুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী রবিবার ভোররাতে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হাছিনা আক্তারের কথিত প্রেমিক মাইন উদ্দিনকে নোয়াখালী থেকে আটক করার তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

প্রতিবেশিদের সূত্র ধরে পুলিশ জানিয়েছেন, কয়েকদি আগে হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাঈন উদ্দিন। এ শাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়দিন ধরে আবু তাহেরের সঙ্গে হাছিনার ঝগড়া ও পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। গুদাম শ্রমিক নেতা মাঈনুদ্দিন মাঝে মাঝে হাছিনার ঘরে আসতো। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর