ছাত্র সংসদ ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা জের ধরেই চট্টগ্রামের ইসলামিয়া কলেজ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গঠনতন্ত্র, নির্বাচন ও কোন ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে কলেজ ছাত্র সংসদের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
কমিটির বিষয়ে অভিযোগের তীর কলেজ অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদসহ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতার দিকে। রাতের অন্ধকারে সিন্ডিকেট করেই এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে তীব্র অসন্তোষ ও টানটান উত্তেজনা চলচে কলেজ ক্যাম্পাসসহ আশ-পাশেই। এই ছাত্র সংসদের কমিটিতে স্থান পাওয়া কয়েকজন পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন নাট্য সম্পাদক এস এম আশরাফুল আরিফ, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রহিম জিসান, ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক এস এম বিশাল ও সদস্য মো. শাহীন। তাছাড়া গত রবিবার দুপুরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একইসাথে ছাত্রলীগের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ইসলামীয়া কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ভোটার তালিকা, তফসিল ঘোষণা, কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন ছাড়াই রাজনৈতিক চাপে রাতের আঁধারে এই দুই কমিটি করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগ এনে ছাত্র সংসদ ও কলেজ ছাত্রলীগে পদ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী পদ থেকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি নিয়েছেন। এ অবস্থায় কলেজের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইসলাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় বৈঠকও করেছি। চট্টগ্রামের ইসলামীয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) কলেজ ছাত্র সংসদের সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদ ২০১৯-২০ সালের ছাত্র সংসদের কমিটি ঘোষণা করেন। এ কমিটিতে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) মনোনীত করা হয়েছে ফয়সাল সাব্বিরকে আর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) মনোনীত করা হয়েছে সৈয়দ ইবনে জামান ডায়মন্ড এবং এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) হিসেবে মো. নোমান সাইফকে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিকী সম্পাদক ফরহাদ জামান লিংকন, নাট্য সম্পাদক মো. এস এম আশরাফুল আরিফ, বক্তৃতা ও বিতর্ক সম্পাদক আজাদ হোসেন অপু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আকমান রসুল মিলু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল আমিন, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রহিম জিসান, ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক এস এম বিশাল, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আরাফ চৌধুরী, ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদক প্রিমিলা প্রিয়তী। এছাড়াও কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে ইয়াছিন আরাফাত, মো. শাহীন ও মো. মোজাম্মেলকে। অব্যাহতি নেয়ার বিষয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিতে দেখা যায়। এছাড়াও এ কমিটির দুইজনের ছাত্রত্ব নেই। তারা হলেন- বার্ষিকী সম্পাদক ফরহাদ জামান লিংকন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল-আমিন। আল-আমিন ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করলেও বর্তমানে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
অন্যদিকে নবগঠিত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতেও আছে নানা অসঙ্গতি। নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর স্বাক্ষরিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন রাকিবুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মীর মো. ইমতিয়াজ। কমিটিতে সহসভাপতি মনোনীত হয়েছেন মনিরুল হক মুন্না ও নুরুল আফসারের কলেজে ছাত্রত্ব নেই। আরেক সহসভাপতি সাইদুর রহমান পাবেল ও আইন বিষয়ক সম্পাদক লক্ষণ দাশ বিবাহিত। সহ-সভাপতি অশোক দাশ চাকরি করেন চট্টগ্রাম বন্দরে। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়া কাজী আসিফ আলভী কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল ইসলাম তানভীর করেন ব্যবসা। এছাড়া এ কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়ারা হলেন-প্রচার সম্পাদক মিঠুন দাশ, দপ্তর সম্পাদক মো. খোকন, অর্থ সম্পাদক আনাচ আন্না, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আরিফ উদ্দিন ও উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাজীব শীল।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার
