করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে সারাদেশের ট্রেন যাত্রীরা। প্রতিদিন ৯ লাখ যাত্রী ট্রেন ভ্রমণ করছে। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশনা দেয়া হলেও বাস্তবে প্রস্তুতি নেই। প্রতিটি স্টেশন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলা হলেও নেই নিজস্ব উদ্যোগ। কমলাপুরসহ দুয়েকটি স্টেশন ছাড়া রেলের উদ্যোগে বসানো হয়নি থার্মার স্ক্যানারসহ প্রতিটি হ্যান্ডওয়াশসহ নানাবিধ উপকরণ। তাছাড়া যেমনি অপ্রস্তুত চট্টগ্রামের সিআরবিস্থ রেলওয়ে হাসপাতাল, ঠিক তেমনি। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ ছাড়া কিভাবে ট্রেন যাত্রীদের জনসমাগম এড়াতে পারবেন সুষ্পৃষ্ট করে বলেনি রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ। তবে যাত্রীসেবা নিশ্চিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানের আওতায় আনা হচ্ছে বলে রেল সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা আতংকের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ইতিমধ্যে ১ জনের মৃত্যুও হয়েছে। সর্বশেষ আক্রান্ত রয়েছে ১৪ জন। সরকারসহ নানাভাবে জনসচেতনতাসহ ব্যাপক উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও এখনও পর্যন্ত লাইন ধরে টিকিট সংগ্রহ, হুড়োহুড়ি ও গাদাগাদি করে হাতল ধরে ট্রেনে উঠানামা, প্রতিটি কামরায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং কামরা ও টয়লেটগুলো অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় করোনা ঝুঁকিতে ট্রেনযাত্রীরা।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যায়ক্রমে সব স্টেশনে প্রবেশ করা যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মাল স্ক্যানের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অবস্থা ভয়াবহ হলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। প্রতিটি স্টেশনে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ, ব্যানার পোস্টার লাগানো শুরু হয়েছে। ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনে থাকা ডিজিটাল মনিটরে সচেতনতামূলক ভিডিও ক্লিপ ছাড়া হচ্ছে। স্টেশন ও ট্রেন পরিষ্কার নিশ্চিত করতে মনিটরিং সেল করা হয়েছে। কারও গাফলতি পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) শামছুজ্জামান বলেন, স্টেশন, ট্রেন সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আরও নিশ্চিত করতে হবে। যাদের গাফিলতি থাকবে- ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাইকে মিলেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হবে। রেলযাত্রীদের আর কীভাবে সচেতন করা যায়, তা নিয়ে বারবার বৈঠক হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন শত শত যাত্রী কাউন্টারে গাদাগাদি করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছেন। এছাড়া ট্রেন স্টেশনে আসা মাত্রই হুড়মুড় করে যাত্রীরা উঠছেন-নামছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেও ট্রেনের যাত্রী ব্যবস্থাপনায় সেরকম কিছু চোখে পড়েনি। বিজয় ও কর্ণফুলী ট্রেনসহ কোনো কোনো ট্রেন ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেনেই টয়লেট ব্যবহারেও সচেতনতার অভাব দেখা গেছে। সাবান, টিস্যুসহ বাথরুমের থাকা মলমূত্র পরিষ্কার করার কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি। সিটের মাথা রাখার স্থানটি ময়লায় কালচে হয়ে আছে। হাতগুলোরও একই অবস্থা।
ট্রেনের দায়িত্বশীল একজন চালক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে নিজেরে টাকায় সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ কিনে নিয়েছি। টয়লেটে টিস্যু দেয়া হলেও এগুলো চুরি হয়ে যায়।
অপ্রস্তুত চট্টগ্রামের রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল
যেখানে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের পদক্ষেপ, সেখানে এখনও অপ্রস্তুত চট্টগ্রাম বক্ষব্যাধি রেলওয়ে হাসপাতাল। যদিও চট্টগ্রামের ১১ জেলায় ১ হাজার ৪০০ আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় ঢাকা রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০ বেডের আইসোলেশন প্রস্তুত হলেও নির্দেশনার অভাবে প্রস্তুতি নেই রেলওয়ে হাসপাতালের। কিন্তু কর্মকর্তাদের দাবি প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া নির্দেশনা এলেই হবে জোরদার করোনা মোকাবেলা, হবে আইসোলেশন বেডও।
পূর্বাঞ্চলের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে বেকাদায়। এখানে মঞ্জুরীকৃত পদও অনুযায়ী নেই নার্স। সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে নার্সের সংখ্যা ৫ জন। তবে ক্লিনার আছে ৭ জন। এখানে করোনার জীবাণু প্রতিরোধক পোশাক তো নেই, নেই হ্যান্ড গ্লাবস-মাস্কও। আছে শুধুই কাগজে-কলমেই।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ বলেন, করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতি রয়েছে চট্টগ্রামেও। এতে সংকটের মধ্যেই ক্রাইসিস মুহূর্তে করণীয় সম্পর্কে ঠিক করে নেওয়া হবে। তাছাড়া এখানে ৪০টি বেড প্রস্তুত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার