২১ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:১৯
কর্মবিরতির ডাক রেলওয়ে রানিং স্টাফদের

রেলের সেই মাইলেজ জটিলতা কাটেনি, আশ্বাসেই ১২ মাস!

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

রেলের সেই মাইলেজ জটিলতা কাটেনি, আশ্বাসেই ১২ মাস!

ফাইল ছবি

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের সেই মাইলেজ নিয়ে এখনও জটিলতা কাটেনি। দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মাইলেজ বঞ্চিত রেলওয়ের কর্মচারীরা। 

আগামী ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে এবং শতবছর আগের রীতি বা ১৬০ বছর ধরে চলমান মাইলেজ সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রজ্ঞাপন জারি না করলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তবে প্রায় ১২ মাস আগে গেল বছরের ২১ নভেম্বর ২০২০ সালে রানিং স্টাফরা মাইলেজসহ নানা বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন রেলপথমন্ত্রী মন্ত্রী বরাবরে। এরপর বিষয়টা নিয়ে সচিব ডিজিসহ দায়িত্বশীল সকলেই আশ্বস্ত দিয়েছিলেন এই মাইলেজ রীতিতে বেতন-ভাতা প্রদান করবেন। কিন্তু সেই আশ্বাসেই এখন রয়ে গেলো।

রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রেলের মাইলেজ আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘ মাস আশ্বাসেই দিনাতিপাত করছি। দিনের পর দিন শ্রম, মেধা এবং সততার সঙ্গে কাজ করে আসছি। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবিটা দিচ্ছেন না। প্রায় ১৬০ বছর আগের রীতি এখন ভিন্নভাবে নেয়া হচ্ছে। কেন বঞ্চিত হবো ন্যায্য পাওনা থেকে। 

তিনি বলেন, মাইলেজ রীতি আমাদের অধিকার। আমাদের কষ্টের ফসল। একটি প্রজ্ঞাপনের কারণে যারা চাকরি করছি শুধুমাত্র তারা নয়, সদ্য অবসরে গেছেন, তারাই মাইলেজ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তারাও চূড়ান্ত পাওনাদি এখনও পাননি। তবে অনেক ধৈর্য ধারণ করেছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছি। এতে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অধিকার ফিরিয়ে না দিলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছরের আগের পুরোনো রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ পদ্ধতি। সম্প্রতি আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রেলওয়ের রানিং স্টাফ মাইলেজসহ বিভিন্ন ভাতার বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় কর্মচারীদের সঙ্গে। এতেই জটিলতার মুখে পড়েছে রেলওয়ে। এক বছর ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও কোনো কুলকিনারা না পেয়ে অবশেষে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রানিং স্টাফরা। রেলের বিভিন্ন স্থানে কোনো না কোনো সময় সভা-সমাবেশসহ আন্দোলন করে আসছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলন্ত ট্রেনে দৈনিক ১০০ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করলেও ওই দিনের বেতনের ৭৫ শতাংশের বেশি মাইলেজ ভাতা পাবেন না সংশ্লিষ্ট রানিং স্টাফ। আর মাস শেষে এই মাইলেজ মূল বেতনের বেশি হবে না। এই প্রজ্ঞাপন জারির হওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন রেলের রানিং স্টাফরা। 

অন্যদিকে আরো জানা গেছে, রেলওয়ের সংস্থাপন কোডের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ের ট্রাফিক রানিং স্টাফ এবং লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স প্রদানের প্রস্তাব হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা মানছেন না রানিং স্টাফরা। 

রেলের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিকিট টেকার (টিটি), গার্ড (ট্রেন পরিচালক), টিটিই (ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনার)। যারা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। 

বর্তমানে ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে এসব রানিং স্টাফের দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ডিউটি শেষে পরবর্তী ১৬ ঘণ্টা বিশ্রামে যেতে পারেন বা ব্যক্তিগত কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু একজন লোকোমাস্টার ডিউটি শেষ করার পরেও সবসময় অতিরিক্ত ডিউটির জন্য তৈরি থাকতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ফোন পাওয়া মাত্রই সাড়া দিতে হয়। 

আরো জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদের ছুটি, পূজার ছুটি, রাষ্ট্রীয় অসহযোগের সময় রেলওয়ে লোকো মাস্টারকে ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। তাদের কোনো ছুটি নেই। সমস্ত মানবসৃষ্ট আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে তাদের ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। বছরে ৩৬৫ দিন তাদের ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। সেই বিবেচনায় বৃটিশ আমল থেকেই ট্রেনের লোকোমাস্টাররা ‘মাইলেজ’ পান। ট্রেন চালকদের ডিউটির সাথে অন্য কারও ডিউটির তুলনা চলে না।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর