১৩ আগস্ট, ২০২২ ১৬:৫৪

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত রুদ্ধ করা যাবে না : পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত রুদ্ধ করা যাবে না : পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত জনগণের সম্পদ। এটি ‘ফ্রি গিফট অব নেচার’। এ প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। সেখানে জনগণের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকতে হবে। কোনো মতেই এটিকে রুদ্ধ করা যাবে না। যে যার ব্যবসা করুক, তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা যাবে না।

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলন হলে সিডিএ কর্তৃক পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা প্রদানে নাগরিক স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী পরিকল্পনার প্রতিবাদে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. সিকান্দার খান এসব কথা বলেন। 

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। ফোরামের সদস্য শাহরিয়ার খালেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সহ-সভাপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রকৌশলী এবিএম এ বাসেত, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা মুনা।

অধ্যাপক ড. মু. সিকান্দার খান বলেন, আমরা কেউ চাইলেও একটি নৈসর্গিক কেন্দ্র সৃষ্টি করতে পারব না। তাহলে কেন একের পর এক প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করব। ফয়েস লেক চলে গেছে। সিআরবি ধ্বংস করার অশুভ পায়তারা চলছে। সরকার তো নিজস্ব অনেক জায়গা সংরক্ষণ করছে। তাহলে জনসাধারণের উন্মুক্ত জায়গা কেন রুদ্ধ করা হচ্ছে।

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে যাচ্ছে সিডিএ। যে কোনো উন্নতমানের নগরীতে সর্বশ্রেণীর মানুষের অবকাশ ও বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের নেটওয়ার্ক থাকে। চট্টগ্রাম নগরে তার সিকিভাগও নাই। নানা উপায়ে তাতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পরিশীলিত নগরগুলোতে উন্মুক্ত পরিসর বৃদ্ধির জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দিয়ে বিস্তৃত সৈকত বা নদী তীরে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কোথাও প্রবেশের অধিকার হরণ করা হয়েছে, এমন তথ্য আমাদের জানা নেই।

তিনি বলেন, সিডিএ কর্তৃক নগরের উন্নয়ন মহা-পরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা ‘সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর’ হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ১৮ক, ২১, ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে ‘পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্রসৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না’ মর্মে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। কার্যত সিডিএ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার  অধিকার সংরক্ষণ করে না’।

সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সিডিএ সূত্রে জানতে পারি, বিপুল ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণের পর পর্যটনের যে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি এড়াতে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে ইজারা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হলো- পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের মতো একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত পরিসরে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। সৈকতে আগতদের বিনোদন ও অবসরের পরিপ্রেক্ষিতে জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, হরেক রকমের দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে চউকের নিয়ন্ত্রণাধীনে রেখে এসব পরিচালনার সুযোগ লাভ ও ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যাতে বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে সহজেই মুনাফা উঠিয়ে আনা যায়। আমরা সিডিএকে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাই।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর