বন্দরনগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমছে না ডিমের দাম। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর অন্তত তিনটি বাজার এবং একাধিক মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো আগের দামেই ডিম বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে আজ সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ ও ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে আমদানি করা হবে। এরপরও যদি দাম নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে ব্যাপক আকারে আমদানি শুরু হবে।’
এদিকে ডিম আমদানির অনুমতির সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তারা আগের দামেই ডিম বিক্রি করছেন। তাদের ভাষ্য, উৎপাদক পর্যায়ে যদি দাম কমে, কম দামে ডিম সংগ্রহ করা যায়- তাহলেই তারা ডিমের দাম কমাবেন। এর আগে কমদামে ডিম বিক্রির সুযোগ নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারের ডিম ও মুরগির খুচরা বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, ‘পাইকারিতে প্রতি ডজন ডিম ১৪৪ টাকায় সংগ্রহ করেছি। বিক্রি করছি ১৫০ টাকা। একটি ডিমে ৫০ পয়সা লাভ করছি। এরমধ্যে আবার দোকান খরচ বাদ যাবে। আমরা কম দামে সংগ্রহ করতে না পারলে কিভাবে কমে বিক্রি করবো।’
একই কথা বলছিলেন রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন। ডিমের দাম কমাতে আমদানির সিদ্ধান্তকে তিনি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা লাভ হিসেব করি পয়সায়। উৎপাদক ও মোকাম পর্যায়ে আগে দাম কমাতে হবে। তাহলে আমরা কম দামে বেচতে পারবো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাজারে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতি ডজন ডিম ১৪২.১০ পয়সায় সংগ্রহ করেছি। পরিবহন ব্যয়, কর্মীদের বেতন, দোকানের খরচ হিসেব করে ১৪৪ কিংবা ১৪৪.৩০ টাকায় বিক্রি করতে না পারলে উল্টো লোকসান গুনতে হবে।’
জানা গেছে, গত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে মূলত ডিমের দাম বাড়তে থাকে। সে সময় প্রতি ডজন ১৪৫ টাকার ডিম ১৮০ টাকা পর্যন্ত ছুঁয়েছিলো। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুটি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করা বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশন (বিসিসি)। এসব কমিটি বাজারে অনুসন্ধান করে জানতে পারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কিছু প্রতিষ্ঠান ডিমের দাম বাড়িয়েছে। এসব অভিযোগে গত বুধবার দেশের ১০টি পোল্ট্রি ফার্ম ও সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসি। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেশের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য আমদানির অনুমতি না দেয়া পজিটিভ বিষয়। কিন্তু ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে অতি মুনাফা করলে আমদানি ছাড়া বিকল্প নেই। একের পর এক পণ্য নিয়ে এমন সংকট তৈরি হচ্ছে। অতি মুনাফা লাভের সংস্কৃতি সামাজিকভাবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে গেছে। যারা ইতিমধ্যে অন্যান্য পণ্য নিয়ে কারসাজির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল