''তুমি শুধুই রাগ করো। এই যে সেদিন রাগ করে চলে গেলা। আবার তো আসছ। আমি তো জানি, তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না। বলসিলা না, এবার বইমেলার পর বাবা-মা সবাই মিলে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যাব। তুমি আমাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবা? আমরা সবাই আসব। প্রমিজ। আমি আসছি দীপন।''
কথাগুলো কাফনে মোড়া মৃত স্বামীর দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক রাজিয়া রহমান।
গতকাল শনিবারই তো সুফিয়া কামাল হলের কোয়ার্টার থেকে স্বামীকে বিদায় দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী ফিরলেন লাশ হয়ে। শনিবার বিকালে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে জীবনের ইতি টানতে হয়েছে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে।
মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর মিনিট কুড়ি পরে স্বামীকে দেখতে আসেন স্ত্রী রাজিয়া। বেলা তখন সাড়ে ১১টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষক কোয়ার্টারের গাড়িবারান্দায় কাফনের কাপড় পরে শুয়ে থাকা ফয়সল আরেফিনকে দেখতে ছুটে এসেছেন শত শত মানুষ। এসময় ভীড় ঠেলে এগুতে থাকেন স্ত্রী রাজিয়া। মুখ তার পাথরমূর্তি। মনে মনে বিড়বিড় করে চলছেন। মানুষের কথার শব্দে তার ক্ষীণ কণ্ঠস্বর মিলিয়ে যাচ্ছিল। পাশে দাঁড়াতেই কানে বাজলো- ''আমি আসছি। প্রমিজ করছি, আমি আসব, তুমি তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না।''
এরপরই লাশের কাছে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন স্বামীর পায়ের ওপর। বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নার রোলে। এ সময় চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি সেখানকার কেউই।
বিডি-প্রতিদিন/০২ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ