নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। মেয়াদ শেষ হওয়ার দীর্ঘ ৪ বছরেও কমিটি গঠনের কোন উদ্যেগ নেই শীর্ষ নেতাদের। এরই মধ্যে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সকল থানা ও ইউনিয়ন কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কমিটি করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হলেও জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের শূণ্যতা ও দায়িত্বহীনতায় এখনও পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি বলে অভিযোগ তূণমূল নেতাদের। তবে কবে নাগাদ এ কমিটি হবে এবং শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করতে নারাজ জেলার শীর্ষ নেতারা।
জেলার দলীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দেশে থাকলেও সাধারণ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি গাজি শাহাজান জুয়েল দীর্ঘদিন ধরেই কানাডায় অবস্থান করছেন। ফলে কোন ধরণের মিটিং ও সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েও তাদের পাওয়া যায় না। সভাপতি দেশে থেকেও অসুস্থতাসহ নানাবিধ কারণে দলীয় কর্মসূচীতে তেমন দেখা নেই। জেলার অন্য নেতারাও সাংগঠনিক কাছে না থেকে শুধুমাত্র দলীয় পদ পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের লবিং তদবিরে ব্যস্ততায় দিন পার করছেন। এতে নেতৃত্ব শূণ্যতায় পড়ে গেছে এ কমিটি।
এদিকে জেলা কমিটির মতো উপজেলা কমিটি গুলোতেও কলহ-বিরোধ চরমে। নেতায় নেতায় দ্বন্দের কারণে দলের কর্মীরা দিশেহারা। হতাশ হয়ে পড়ছেন সমর্থকেরা। ফলে দক্ষিণ জেলায় বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো গতি আসছে না। এ জন্য নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা ও কোন্দলকে দায়ী করেন কর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, "জেলার কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের সাথে আলোচনা করে চলতি মাসের মধ্যে করার প্রক্রিয়া করছে কেন্দ্রীয় কমিটি।"
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, "কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বলতে পারবে। আমি অসুস্থতা থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডের কর্মসূচীতে মাঠ ছাড়িনি আমি। তবে জেলা কমিটির নেতৃত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।"
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, "মূলত সভাপতি ও সেক্রেটারির নিস্ত্রিয়তার কারণে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে। একটি সংগঠনের মূল দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক। অথচ তিনি থাকেন কানাডায়। আসেন মাঝেমধ্যে। তাও আবার ঢাকায়, চট্টগ্রামে আসেন না। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকান্ডে তার অনুপস্থিতিই সাংগঠনিক স্থবিরতার মূল কারণ। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অনেকে সাংগঠনিক স্থবিরতার কারণে দল ছেড়েছে।"
প্রসঙ্গত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের উপস্থিতিতে ২০১০ সালের ২০ মার্চ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তা অনুমোদন করেন। কিন্তু তখন দক্ষিণ জেলার এ কমিটি মেনে নিতে পারেননি বিএনপির একটি অংশ। গঠন করা হয় পাল্টা কমিটি। ওই কমিটিতে আহমদ খলিল খানকে সভাপতি এবং ইফতেখার মহসিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এর ফলে কমিটি-পাল্টা কমিটির কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিধাবিভক্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে একত্রিত করতে উদ্যোগ নেয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। পুনর্গর্ঠিত কমিটিতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি বহাল রাখা হলেও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে পটিয়ার সাবেক এমপি গাজী শাহাজাহান জুয়েলকে নতুন সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমদকে পুনর্গঠিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-২