বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট (বিভাগীয় প্রধান) ডা. এমএ আজাদ সজল হত্যার ঘটনায় ২ দিনেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১৬ জন কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও হত্যাকাÐের কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি তারা। অথচ ডা. আজাদকে হত্যা করার অভিযোগে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন তার ভাই ডা. শাহরিয়ার উচ্ছাস।
তবে পুলিশ বলছে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডা. আজাদের লাশ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। শীঘ্রই এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবে আশা তাদের। এদিকে ডা. আজাদের মৃত দেহের ময়না তদন্ত শেষে বিভিন্ন আলামত ও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরেও নগরীর কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল (যেখান থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছিলো) সরেজমিন পরিদর্শন করে পুলিশ। এ সময় তদন্তের স্বার্থে খুঁটিনাটি সব কিছু তদারক করেন তারা। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরদারি করছেন। তবে মামলার বিষয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখছে পুলিশ।
এদিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ডা. আজাদের মৃত দেহের ময়না তদন্ত শেষে বিভিন্ন আলামত এবং ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকার প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কামদা প্রসাদ সাহা জানান, একটি মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ডা. আজাদের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থলও পরির্দশন করেছেন। ময়না তদন্তের বিভিন্ন আলামত ও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকার প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষাগারে এবং শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের হিস্তোপ্যাথলোজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
অপরদিকে ওই ঘটনার পর ২ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ রয়েছে অন্ধকারে। গত ২ দিনে পুলিশ মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১৬জন কর্মীকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও ডা. আজাদ সংক্রান্ত কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তারা।
এ কারণে কাউকে গ্রেফতার কিংবা আদালতে পাঠাতে পারছে না পুলিশ। নিহতের ভাই হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করলেও ডা. আজাদ হত্যার কোন কুলকিনারা করতে পারছে পুলিশ। তবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডা. আজাদের লাশ উদ্ধার ঘটনা তদন্ত হচ্ছে এবং শিঘ্রই এর রহস্য উন্মোচন হবে আশা কোতয়ালী থানার ওসি মো. নুরুল ইসলামের।
উল্লেখ্য, ডা. এমএ আজাদ সজল ছিলেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট (বিভাগীয় প্রধান)। তিনি নগরীর কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতেন এবং ওই ভবনের ৭ম তলায় ডরমেটরিতে থাকতেন। ২ সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকেন।
গত মঙ্গলবার সেহেরীর সময় তার স্ত্রী কেরানীগঞ্জ থেকে মুঠোফোনে রিং দিয়ে না পেয়ে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশকে জানায়। পুলিশ তার কক্ষের দরজা ভেঙ্গেও তাকে খুঁজে পায়নি। পরে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল ভবনের লিফটের নিচ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই ডা. শাহরিয়ার উচ্ছাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে শুরু থেকেই দুর্ঘটনাজনিত কারণে ডা. আজাদের মৃত্যু হতে পারে বলে দাবি করে আসছেন মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক মানিক।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন