ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়াজুড়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে অন্তত শতাধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটার কারণে আশপাশের পরিবেশ, জনবসতি, কৃষিজমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জনবহুল এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবে ঢাকা জেলায় ৫৩৭টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্ত ২৭১টি, লাইসেন্স বিহীন ২৬৬টি।
জানা যায়, সাভারে ২০১৪ সালে বৈধ ইটভাটা ছিলো ২৭টি, লাইসেন্স বিহীন ছিলো ৯৩টি। ২০১৫তে বৈধ ছিলো ৪৩টি, অবৈধ ১০৫টি। ২০১৮তে লাইসেন্স ছিলো ৩৯টি ইটভাটার, এইসময় অবৈধ ছিলো ১১৫টি। গত বছর আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে ইটভাটা ছিলো ৭০টি, যারমধ্যে ৬৯টির লাইসেন্স ছিলো না। নিয়মানুযায়ী ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এবং আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
অভিযোগ আছে, স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন। এসব ভাটায় চিমনির উচ্চতা বাড়ানো হলেও তা থেকে বের হওয়া ধোঁয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। চিমনিবাহিত ধোঁয়ায় চারপাশের জনস্বাস্থ্য পড়েছে ঝুঁকির মুখে। এছাড়া, আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ফল গাছের ফলন কমে যাওয়া, উৎপাদিত সবজি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। সাদা ও কালো ধোঁয়ায় এলাকাবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে।
সাভারের আশুলিয়া বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাটাগুলোতে কয়লার পাশাপাশি পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, প্লাস্টিক, টায়ার। শ্রমিকরা জানান, এসব ভাটায় কাঠ ব্যবহার হয় না। সারা বছর কয়লা পোড়ানো হয়। তবে আগুন ধরানোর সময় কাঠের প্রয়োজন হয়। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, একসময় এসব এলাকায় সারা বছর চাষবাস হতো। কিন্তু প্রভাবশালীরা কাউকে অর্থের বিনিময়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে ওই সব জমি ইজারা নিয়ে বা কিনে ইটভাটা স্থাপন করেছেন। একারণে বেকার হয়ে গেছেন এলাকার অনেক কৃষক, এছাড়া জীবিকার প্রয়োজনে পেশা বদল করেছেন অনেকেই।
আশুলিয়ার কৃষক ফরিদ দেওয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৩৫ বছর ধরে আমি কৃষি কাজ করি জোর করে ইট ভাটার মালিকরা জোর করে ভাটার তৈরী করেছে । আমি আগেই জমির মাটি বেঁচতে চাইনি। কিন্তু আশপাশের সবাই বেঁচার কারণে আমারও বেঁচতে হয়েছে। আমার জমি ধসে যাচ্ছিল। মাটি এমনিতেই যেত। তাই বিক্রি করেছি।’
আশুলিয়ার আরেক কৃষক দেওয়ান আনিস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্যার পর এমনিতেই অনেক লস হয়ে গেছে। মাটি বেঁচে কিছু টাকা পেয়েছি। তবে মাটি বিক্রির বিষয়ে কৃষি বা মৎস্য অধিদফতর থেকে তিনি কোনো অনুমতি নেননি বলে জানান এই দুই কৃষক। একই অবস্থা আশপাশের বহু কৃষকের।
আশুলিয়ার মাটি ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে অর্ধশত শতাংশ জমি থেকে মাটি ক্রয় করে তিনি স্থানীয় ভাটায় মাটি দিচ্ছেন। ওই জমি থেকে ৮ ফুট মাটি বা আরও গভীর পরিমাণে গর্ত করে মাটি নিবেন বলে কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে জানান তিনি।’
সাভারে সচেতন নাগরিক সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গেন্ডা, সাভার আমিন বাজার , বড় আশুলিয়ার ‘আবাসিক এলাকার মধ্যে গড়ে তোলা ইটভাটাকে অবস্থান ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ও অনুমোদন দেওয়া আইনের লঙ্ঘন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরত একশ্রেণির কর্মকর্তা এসব এড়িয়ে ভাটার অনুমোদন ও ছাড়পত্র দেন।’
এবিষয়ে সাভার নদী পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম সামসুল হক বাংলাশে প্রতিদিনকে বলেন, তদারকি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না করায় ছয়টি নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।‘সাভার ও আশুলিয়ার এবং ধামরাইয়ে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। অবস্থান ও পরিবেশগত ছাড়পত্রও দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।’
ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোসাবের হোসেন মোহাম্মাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। করোনাকালীন অভিযান কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ফের চালু করা হবে।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আরা নিপা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতোমধ্যে ভাটা মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ-খড়ি ব্যবহার না করেন। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল