দুর্ঘটনা কবলিত সেফ লাইন পরিবহনের বাসচালক ঘুম চোখে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন বাসটির চালকের হেলপার (সহকারী) তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, বারবার সতর্ক করার পরেও তিনি (চালক) আমার কথা না শুনে উল্টো ঝাড়ি দিয়েছেন। আর এ কারণেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে তানভীর আহমেদ সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ভেঙে গেছে, আর কেটে গেছে পা। তানভীর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি ঢাকা-কুষ্টিয়া-শৈলকুপা রুটে চলাচল করত। গত শনিবার সকালে আমরা যাত্রী নিয়ে ঢাকার গাবতলী থেকে শৈলকুপার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাই। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মারুফ হোসেন মুন্না। ওই দিন রাত ১০টার দিকে আমরা শৈলকুপায় গিয়ে পৌঁছাই। এর এক ঘণ্টা পর আবার ৪০ জন যাত্রী নিয়ে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। তানভীর বলেন, শৈলকুপা থেকে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে আমাদের গাড়ি চালক মারুফ হোসেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে গাড়ি চালাতে থাকেন। এতে পথে মহাসড়কে বাসের চাকা ফেটে গিয়েও একবার দুর্ঘটনা হয় এবং বেশ কয়েকবার আমাদের গাড়িটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। কিন্তু আমি সতর্ক করার কারণে বারবারই রক্ষা পাই। এর পরও মারুফ ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই রবিবার সকালে সাভারের বলিয়ারপুরে আমাদের বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।
তানভীর বলেন, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক মারুফ হোসেন মুন্না হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় মারা যায় ও সুমন নামে সুপার ভাইজারের কোনো খবর জানি না। আমি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। তানভীর জানান, চালক মারুফ হোসেনের বাড়ি চাঁদপুর। পরিবার নিয়ে তিনি রাজধানীর লালকুঠি বড় মসজিদের পাশে থাকেন। মারুফের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। গত তিন দিন আগে লেগুনা ছেড়ে নিউ গ্রীণ এক্সপ্রেসের ব্যানারে বাস চালাচ্ছেন মারুফ। আর তিনি (তানভীর) এখনো চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। তানভীর আরও বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাসের পেছনে ‘সেফ লাইন’ লেখা থাকলেও মূলত গাড়িটি চলত ‘নিউ গ্রীন এক্সপ্রেস'র ব্যানারে। এই কোম্পানির ৪টি বাস রয়েছে। মারুফ হোসেনের বাবা ও তার এক বন্ধু ওই পরিবহনের মালিক বলে শুনেছি। আগের পরিচয়র সূত্র ধরে মারুফের অনুরোধে এক দিনের জন্য আমি তার সহকারীর কাজ করছিলাম। আমি মূলত সাকুরা পরিবহনে হেলপারের চাকরি করি। এদিকে অভিযুক্ত সেফ লাইন গাড়িটির চালক মারুফ হোসেন মুন্না চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
উল্লেখ্য, রবিবার সকালে সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় বাস-ট্রাক ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। এই ঘটনায় ঘাতক বাস সেফ লাইন পরিবহনের নাম উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন সাভার হাইওয়ে পুলিশ। সাভার হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, অজ্ঞাত চালকের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও তদন্তে আরও জড়িত কাউকে খুঁজে পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে সেফ লাইন গাড়ির চালক মারুফ মারা গেছে, তার সুরুতল রিপোর্ট আমাদের হাতে। পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ মেলেনি। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার শিকার গরুর ট্রাকটির চালক ও সহকারী কাউকেও এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গাড়ির মালিক একটি বেসরকারী ব্যাংকের নামে কাগজ, তার আসল মালিককে খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল