নিপাহ ভাইরাস কেড়ে নিল বরিশালের বানারীপাড়ার তিন বছরের শিশু তহুরার প্রাণ। প্রায় এক মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে রবিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে জীবন প্রদীপ নিভে যায় তার। এ যেন ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই অঙ্কুরে ঝড়ে পড়ার মত। বাড়িঘর মাতিয়ে রাখা শিশু তহুরার নিষ্পাপ নিথর দেহ কাঁদাচ্ছে সবাইকে। আর কোনদিন পুতুল নিয়ে খেলবে না সে। বাবা-মায়ের কাছে চকলেট ও খেলনা কিনে দেওয়ার বায়নাও ধরবে না সে।
সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে জাগতিক সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তহুরা কেবলই ধূসর স্মৃতি হয়ে স্বজনদের মানসপট ভেসে বেড়াবে, তাদের অশ্রুজলে সিক্ত করবে। তহুরা বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহম্মদাবাদ বেতাল গ্রামের এক সময়ের ইতালি প্রবাসী ও বর্তমানে ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন সান্টুর মেয়ে।
তহুরার বড় চাচা উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এমএ সালেক হাওলাদার ও অপর চাচা ইতালী প্রবাসী জামাল রেজা জানান, ভাতিজি তহুরা বাড়িতে বসে কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার সপ্তাহখানেক পরে জ্বর ও খিচুনি উঠে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। এক মাস পূর্বে প্রথম দিন তাকে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দ্বিতীয় দিন বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মহাখালীর আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৮ দিন চিকিৎসার পরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শিশু হাসপাতালে ২০ দিন পিআইসিউতে চিৎিসাধীন থাকা অবস্থায় রবিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তহুরা মারা যায়।
তিনি আরও জানান, তার ভাতিজি প্রথমে ঢাকায় আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ও পরে শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম. মনির হোসেনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। চিকিৎসক তাদের জানিয়েছেন, তহুরা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।
এদিকে, শিশু তহুরার অকাল মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে বইছে শোকের মাতম। বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্বজনদের বুক ফাটা আর্তনাদ-আহাজারিতে হাসপাতাল ও বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠেছে।
প্রসঙ্গত, বানারীপাড়ায় নিপাহ ভাইরাসে শিশু তহুরারই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত