একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে উঠছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলীয় কোন্দল মিটিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নগরের আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটিও ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় জাপা। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে সভাপতি ও এয়াকুব হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি করা হয়েছে। এর আগে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী মেহজাবিন মোরশেদ এমপি। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংগঠনের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেত্বত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে মাঠে কাজ করে যাবেন বলে জানান ঘোষিত কমিটির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে প্রতিটি আসনেই। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটির পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ জেলাসহ তিন সাংগঠনিক কমিটির নেতারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশ, সাংগঠনিক মিটিং এবং সংগঠনের দিক নির্দেশনামূলক জরুরি বৈঠকও করছে নিয়মিত। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমাবেশগুলোতে উপস্থিত থাকছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কোতোয়ালি আসনের এমপি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ নগর, উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিন সাংগঠনিক কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত অংশ নিচ্ছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ত্রাণ বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে মাঠে আছেন তারা। জাতীয় পার্টির নেতাদের তৎপরতা দেখে অন্য দলের নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। দলীয় প্রার্থীর আলোচনায় উঠে আসছে দলের ত্যাগী প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর নামও। তিনিও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন। বাঁশখালীতে সম্প্রতি তার একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা। এ অনুষ্ঠানে দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এ ঘটনায় বাঁশখালীতে শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে হরতালও পালিত হয়।জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী মেহজাবিন মোরশেদ এমপি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে কাজ করছি। নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থেকে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছি। সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে যাবেন বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম নগর জাতীয় পার্টির নেতা রেজাউল করিম রেজা বলেন, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা ও মনোনয়নের বিষয়ে বিভিন্ন দলের একটি গ্রুপ নানাভাবে যড়যন্ত্র করছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও বাধার সৃষ্টি করছেন। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোথায় কোথায় দলীয় মনোনয়ন দিবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক কমিটি নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার ৩৩৩ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শীর্ষ নেতারা বর্তমানে সাংগঠনিক কাজসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। তা ছাড়া দলীর প্রধান এরশাদ ৩০০ আসন থেকেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেবেন বলেও জানান বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। এরপর থেকেই আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের দলীয় নেতারা। তবে আগের মতোই মাঠ ধরে রেখেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, নগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি মেহজাবিন মোরশেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ, পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সামশুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে উঠেছেন নগর ও জেলার অন্য শীর্ষ নেতারা।