বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আঞ্চলিক সংগঠনের আড়ালে ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র

শান্তিচুক্তির ২১ বছর

মানিক মুনতাসির, পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে

পার্বত্য শান্তিচুক্তির অন্যতম এবং প্রধান শর্ত ছিল অবৈধ অস্ত্র সমর্পণ। সেই সঙ্গে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অখ-তার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য প্রদর্শন। অথচ সেই শান্তিচুক্তির ২১ বছর পরও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের আড়ালে পৃথক জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে একাধিক গোষ্ঠী। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে জুম্মল্যান্ডের ব্যানারে শোক প্রকাশ করা হয়, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। শুধু তাই-ই নয়, জুম্মল্যান্ড নামে একাধিক ফেসবুক পেজ খুলে তৎপরতা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জুম্মসৈনিক, সংগ্রামী জুম্ম, জুম্মবীর লগেসমারীসহ ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের পেজ খুলে বছরের পর বছর অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে একাধিক গোষ্ঠী। জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ‘জুম্মল্যান্ড’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এক বা একাধিক গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন চেয়ে দূতাবাসগুলোতে বার্তাও পাঠিয়েছে। এমনকি ‘জুম্মল্যান্ড টিভি’ নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট ছাড়াও অনলাইনে এই নামে ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। জানা গেছে, ভিতরে ভিতরে তারা তাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় দিবস, পৃথক মুদ্রাও ঘোষণা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এই দুই সংগঠনের সংস্কারপন্থি অপর দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেন না। এমনকি সেটি তারা নেনওনি। কেননা তারা অখ- বাংলাদেশে বিশ্বাসী নয়। বরং তারা পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তবে পাহাড়িদের মধ্যেও অধিকাংশই এর বিরোধিতা করে আসছেন বলে জানা গেছে। ফলে পাহাড়ে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হচ্ছে। অনেকে নিহতও হচ্ছেন। এ জন্য পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠাকে জোরদার করার লক্ষ্যে সেনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন খোদ পাহাড়িরা। বাঘাইছড়ি উপজেলার নয়মাইল এলাকার অধিবাসী যোগেশ ত্রিপুরা (৫৫) বলেন, ‘পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু অনেক সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ এসব এলাকাকে অশান্ত করে তোলে। আমরা অনেক ভয়ে থাকি। কিন্তু রুটি-রুজির সন্ধানে কাজ তো করতেই হবে। এ জন্য বের হতে হয়।’ নিরাপত্তা বিশ্লেষক বি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শান্তিচুক্তির আগে এ ধরনের গোষ্ঠীর বেশ তৎপরতা ছিল। এখনো এ দেশের পার্বত্য এলাকা নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র আছে। অনেক দেশ ও তাদের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) তৎপরতাও বেশ সন্দেহজনক। সরকারকে এ বিষয়ে তৎপর হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এসব অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও অখ-তা বজায় রাখতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, এসব গোষ্ঠী তাদের কথিত জুম্মল্যান্ডের পৃথক পতাকা, মুদ্রা, সরকার কাঠামো ও লোগোও তৈরি করে নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করছে। এসব বিষয়ে তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইনে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ নামে একাধিক ফেসবুক পেজও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা পার্বত্য এই অঞ্চলকে ‘জুম্মল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনলাইনে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মে. জে. এস এম মতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছে তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনো দিনই বাস্তবায়ন হবে না। এ অঞ্চলসহ সারা দেশের অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।’

সর্বশেষ খবর