রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ওড়নার গিঁটেই হত্যার রহস্য

পিবিআইয়ের তদন্ত

আলী আজম

নুরানি আক্তার নূপুর। বয়স আট বছর। বাবা নূর মোহাম্মদ মোবাইল ফোনে নাটক দেখছিলেন। নূপুর দেখছিল টিভি। ২০/২৫ মিনিট পর নূপুর তার বাবার কাছে মোবাইল ফোনটি চায়। নূর মোহাম্মদ মেয়েকে ফোন না দিয়ে ধমক দেন। এতে নূপুর বাবার সঙ্গে জেদ করে এবং খারাপ ভাষায় গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূর মোহাম্মদ মেয়ে নূপুরের গলা চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর নূপুর নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। পরে নূর মোহাম্মদ ঘরের মধ্যে কাপড় শুকানোর রশিতে নূপুরের লেহেঙ্গার ওড়না বেঁধে আত্মহত্যার ঘটনা সাজায় এবং আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। ঘটনাটি গত বছরের ৩ এপ্রিলে নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার রসুলপুর রেল কোয়ার্টারে। ওইদিনই সৈয়দপুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা নিয়ে ময়নাতদন্ত করে পুলিশ। এতে নূপুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে রিপোর্ট এলে সেটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। কিন্তু থানা পুলিশ ১০ মাসেও প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই রংপুর জেলাকে নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্তের মাত্র ১১ দিনের মাথায় উন্মোচন করা হয় নূপুর হত্যার রহস্য। পিবিআইয়ের বক্তব্য- ‘ওড়নার গিঁটেই লুকিয়ে ছিল হত্যার প্রকৃত কারণ।’ পিবিআই রংপুর জেলার এসপি এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নূপুর হত্যা মামলার তদন্ত পাই। আট বছরের একটি শিশু ওড়নায় এরকম গিঁট ও কাপড় শুকানোর হালকা রশি দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না বলে সন্দেহ হয়। গত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) নূপুরের বাবা নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এর আগে পিবিআই রংপুর জেলার এসআই নুরে আলম সিদ্দিক মামলার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার আলামত হিসেবে নীল রঙের লেহেঙ্গার ওড়না জব্দ করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পারিপার্শি¦কতা ও আলামত হিসেবে জব্দ করা ওড়নায় দেওয়া গিঁট দেখে পিবিআই পুলিশের সন্দেহ হয়।

 এরপর নূপুরের বাবা নূর মোহাম্মদকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি একেক সময় একেক কথা বলে পিবিআইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওড়নার গিঁটেই খুলে যায় হত্যা-রহস্যের জট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর