শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিপদ বাড়ল উপকূলবাসীর

নোয়াখালীতে ৩০টি মুজিব কিল্লা জবরদখল করে নিয়েছে দুষ্টচক্র

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকার মানুষ যাতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় নিরাপদ জায়গায় উঠে যেতে পারে সেজন্য তৈরি করা হয়েছিল কিল্লা (৪৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট মাটির ভিটা)। এসব কিল্লা যেহেতু তৈরি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে তাই এলাকার লোকমুখে এগুলোর পরিচিতি হয় মুজিব কিল্লা নামে। উপকূলে দুর্যোগের সময় জীবনরক্ষার জন্য তৈরি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি এসব কিল্লা নির্মিত হয়। আশ্রয় কেন্দ্রে লোকসমাগম বেশি হলে কিল্লাতে গিয়ে ওঠা যেত। উপকূলবাসীর কল্যাণার্থে ১৯৭২ সালে এসব কিল্লা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন জননেতা আবদুল মালেক উকিল (জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও সাবেক মন্ত্রী)। এখন, ইজারাদার নামধারী কিছু লোকের লোভের শিকার হয়েছে ৩০টি মুজিব কিল্লা। দুষ্টচক্রের সদস্যরা কিল্লার কাঠামো বদলে ফেলছে। তারা সেখানে বাণিজ্যভিত্তিক মুরগি ও মাছের খামার, এমনকি গবাদিপশুর খামারও গড়ে তুলেছে।

নোয়াখালী জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ১৮টি ও সুবর্ণচরে ১৫টি কিল্লা তৈরি করা হয়। প্রতিটি কিল্লার জন্য বরাদ্দ হয় ৫ একর জমি, কিল্লা নির্মাণের জন্য কাটা হয় দুটি করে পুকুর। এসব কিল্লার তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণর দায়িত্ব অর্পিত হয় রেডক্রিসেন্টের ওপর। এই ৩৩টি কিল্লার কারণেই ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় রক্ষা পেয়েছিল উপকূলের মানুষের জীবন ও তাদের পশুপাখি। এর মধ্যে ৩০টি কিল্লা জবরদখল হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, রেডক্রিসেন্ট নোয়াখালী ইউনিটের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধভাবে তাদের আপনজনের কাছে কিল্লাগুলো ইজারা দিয়েছে। ওই কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তারা ইজারা দেননি। ইজারা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরজব্বর ইউনিয়নে নির্মিত কিল্লাটিতে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছের ঘের করা হয়েছে। জামাল ব্যাপারী ও আবুল কাশেমসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী কিল্লাগুলো দখল করে রেখেছে। কেটে ফেলা হয়েছে বহু গাছ। একই অবস্থা চর আমান উল্লাহর কাটাবুনিয়া গ্রামের কিল্লাটিরও। এখানে বিভিন্ন খামার বানিয়ে সীমানা প্রাচীর তুলে লোহার ফটক বসানো হয়েছে।

সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী প্রধান রফিক উল্লাহ সুমন জানান, উপকূলের এ অঞ্চলে বিস্তর গবাদি পশু রয়েছে। জবরদখলের কারণে কিল্লাগুলোর প্রাকৃতিক আকার বিকৃত হয়ে গেছে। এভাবে চলতে দিতে থাকলে সামনের দিনগুলোয় কিল্লাগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, কিল্লাগুলো উদ্ধার করে অবিলম্বে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উচিত।

নোয়াখালী রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উপপরিচালক আবদুল করিম বলেন, ‘কিল্লার বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন।’ এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে তিনি নারাজ।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৈতী সর্ববিদ্যা বলেন, মুজিব কিল্লা বন্দোবস্ত ও বেদখলের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এখন যেহেতু বিষয়টি জানতে পেরেছি। খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম বলেন, কিল্লাগুলো সংস্কারের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন প্রতিবেদন তৈরি করছে। এ ছাড়া বেদখল হওয়া কিল্লাগুলো উদ্ধারে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করে চলেছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর