নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। নগরের প্রায় সব অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট। অপরদিকে প্রধান সড়কে চলছে টমটম ইজিবাইকের দাপট। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশের যোগসাজশে চলছে এসব নির্ভয়ে। এতে করে সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা অপচয় করছে মাসে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে মাঝখানে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা পাচ্ছে পুলিশ আর কতিপয় নেতা। পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, এটা তো আমরা বন্ধ করতে পারব না, আগে মার্কেটিং বন্ধ করতে হবে, বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। যদি না করে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরও তারা অবৈধভাবে ব্যবহার করবেই। আমরা সবাই জানি এসব অবৈধ, তারপরও তো আমরা চড়ছি, ক্রয় করছি। এ ছাড়া চার্জিং স্টেশন বসিয়ে প্রিপেইড মিটারে চার্জ দিলে আমরা ৭ টাকার বদলে সেখানে ৯-১০ টাকা নিচ্ছি রেটিং অনুযায়ী। চট্টগ্রাম ইলেকট্রনিক চার্জার রিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা কোনো অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করি না। আমাদের সমিতির আওতাধীন প্রায় ৮ হাজার রিকশা আছে। আমাদের প্রতিটি রিকশার জন্য বিদ্যুৎ বিল আসে ৩০-৪০ টাকা, গ্যারেজ ভাড়াসহ এখন ১৫০-১৭০ টাকা করে আমরা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। হাইওয়ে ছাড়া অন্য সব সড়কে এসব যানবাহন চলতে পারবে। সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণের টিআই (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা বলেন, যারা বলে পুলিশকে টাকা দিয়ে এসব যানবাহন চলছে, তারা নিজেরা বাঁচার জন্য বলছে। আমরা গত এক মাসে প্রায় ৩০০ অটোরিকশা আটক করেছি। সরেজমিন দেখা যায়, এক সময় প্যাডেলচালিত রিকশায় মোটর লাগিয়ে অটোকিশা করলেও এখন দৈত্য আকারের রিকশা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে দুর্বল ব্রেক আর মোটরের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না চালকরা। যার কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা, আর যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। এ ছাড়া প্রধান প্রধান সড়কে ভারী যানবাহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। জানা যায়, নগরে প্রায় ২০ হাজারের মতো অটোরিকশা চলাচল করে কয়েকটি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে।
তবে ইজিবাইকের সংখ্যা কত তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। নগরে চলাচল করা ব্যাটারি রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ ১৩০ ভোল্টের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে আবার কেউ কেউ ২৩০ ভোল্টের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে। এই দুই ধরনের ব্যাটারি চার্জ দিতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অপরদিকে একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য ৪-৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০-১১০০ ওয়াট হিসাবে ৫-৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২০ হাজার অটোরিকশা বৈধ-অবৈধভাবে ব্যবহার করছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইউনিট। সে হিসাবে দৈনিক ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসব অটোরিকশা অপচয় করছে। দিন-রাত পালাক্রমে চলা এসব রিকশা বা ইজিবাইক চার্জের জন্য ব্যবহার হচ্ছে উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশ। অবৈধ বিদ্যুৎকে সিস্টেম বলা হলেও সাশ্রয়ে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মূলত এসব রিকশা আটকালেও ডাম্পিং করা হয় না।