বুধবার, ৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাজশাহী

ভুল পরিকল্পনায় ওয়াসা

♦ শুষ্ক মৌসুমে নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১৩ কোটি লিটার ♦ ঘাটতি থাকে ২ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পদ্মায় পানির উচ্চতা কমতে থাকলেও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মার পানিকে প্রধান উৎস ধরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পানি শোধনাগার স্থাপন করছে ওয়াসা। ওয়াসা বলছে, সারা বছর এখানে অন্তত ৩০ ফুট গভীর পানি থাকবে। প্রতিদিন পানি সরবরাহ দেবে ২০ কোটি লিটার। তবে নদী ও ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, যেখানে পদ্মায় সারা বছর পানি থাকে না, সেখানে এত বড় প্রকল্প আত্মঘাতী হতে পারে। ভুল পরিকল্পনাই করছে রাজশাহী ওয়াসা।

পদ্মার পানির উচ্চতা এক দশকে নেমেছে প্রায় ১০ মিলিমিটার। সেই সঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে নামছে রাজশাহী অংশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহী নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা থাকে ১৩ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা দিচ্ছে ১০ কোটি ৭০ লাখ লিটার। প্রতিদিন ঘাটতি থাকে ২ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি। ওয়াসা বলছে, গোদাগাড়ী পয়েন্টে চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ সংকট থাকবে না। যদিও রাজশাহীতে সুপেয় পানির জন্য ২০১১ সালে শ্যামপুরে নির্মিত ১০৩ কোটি টাকার পানি শোধনাগারটি পদ্মায় পানি না থাকায় বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে।

রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা। চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড কাজটি বাস্তবায়ন করছে। পদ্মায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনে চীনা এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০২১ সালের ২১ মার্চ চুক্তি করে রাজশাহী ওয়াসা। এ শোধনাগারের মাধ্যমেই ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে পানি সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করা হবে বলে আশা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। আড়াই থেকে তিন শতাংশ সুদে হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ব্যয় করবে ২ হাজার ৩১৩ কোটির বেশি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে চার বছর। রাজশাহী ওয়াসা জানায়, শহরে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ কোটি ৩২ লাখ লিটার। প্রতিদিন পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ ৮ কোটি ৬৫ লাখ লিটার পানি তোলা হয়। এখন মাত্র ৯০ লাখ লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধন করা হয়। তাও প্রতিদিন ১ কোটি ৭৭ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থাকে। এটি হলে ঘাটতি থাকবে না।

সরেজমিনে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সারেংপুর গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার যে স্থানে ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি স্থাপন করা হচ্ছে সেখানেই ভারত থেকে গঙ্গা নদী বাংলাদেশে ঢুকে পদ্মা হয়েছে। এখান থেকেই আবার পদ্মার শাখা নদী হিসেবে বেরিয়ে গেছে মহানন্দা। দুই নদীর মোহনায় ওয়াসার এ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ করে কাজ শুরু হয়েছে। চলছে বালু ভরাটের কাজ। পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে বেস ঢালাই ও পাইলিংয়ের জন্য মিক্সিং মেশিন। আগামী মাসে এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে।

রাজশাহী ওয়াসা প্রকল্পের চীনা প্রধান প্রকৌশলী সানচিং বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে ভরাটের কাজ শেষ করেছি। আগামীতে এখানে পাইলিং ও অন্যান্য কাজ শুরু করা হবে।’

রাজশাহী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করা হয়। কাজ শুরু হয়েছে, অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ সাল নাগাদ।’

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূগর্ভস্থ পানি যে নেমে যাচ্ছে, এ ছাড়া সাধারণ পানিতে যে আয়রন থাকে সেটা থেকে নিরাপদ পানি উৎপাদন হবে।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘ওয়াসা যে প্লান্টটি করছে, এর যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে আমি মনে করি এটি ত্রুটিপূর্ণ। ফারাক্কা পানি চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং আমার মনে হয় ওয়াসার এ প্রকল্প আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কিছু না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর