কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই অংশ। গতকাল সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে প্রথমে দুপুর ১টায় সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে দুপুর পৌনে ২টায় সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকের নেতৃত্বে পৃথক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশের শান্তিশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জানমাল বিনষ্টে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শাহ মঞ্জুরুল হক। অন্যদিকে অপর সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনে নিহত ও আহতের সংখ্যা সরকার গোপন করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে গুলি করেছে। ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। আবার তদন্ত শুরুর আগেই পাইকারি হারে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মৌলবাদী শক্তি সারা দেশে যে অরাজকতা, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার নিন্দা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জানমাল বিনষ্টে বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। মেট্রোরেল, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অসংখ্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হয়। তিনি বলেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে তৎপর। শাহ মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, দেশের জনগণ এই চক্রান্ত, ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। সুপ্রিম কোর্ট বার দেশের জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, আইনশৃঙ্খলা ও জনজীবন রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তিনি এ ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও সাজা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রমজান আলী শিকদার, সহ-সভাপতি ড. দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তদন্ত ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের নাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা আইনের শাসনের পরিপন্থি। অবিলম্বে এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এতগুলো মানুষ মারা গেছে। অথচ সরকার এখনো নিহত ও আহতদের তালিকা প্রকাশ করছে না। এ সময় তিনি দেশে চলমান কারফিউ প্রত্যাহার এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালু ও মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানান। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমসহ সব আইনজীবীর মুক্তি দাবি করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ ফজলে ইলাহী অভি ও ফাতেমা আক্তার।