দেশে এক যুগেও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতা বাড়েনি। এই সময়ে টিকা কর্মসূচির হার ৮৪ শতাংশ। এতে দেখা যায়, টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ১৬ শতাংশ শিশু।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ পরিচালনায় ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহায়তায় গত বছর তিনটি স্বতন্ত্র গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিকাদানের বর্তমান অবস্থা, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় বিষয়ে গবেষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইপিআই কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে কর্মসূচিটি সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইপিআই কাভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভের (২০১৯) পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে ইপিআইয়ের কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে। বর্তমানে তা ৮৪ শতাংশ। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে টিকাদানের পরিস্থিতির ভিন্নতা পাওয়া গেছে। গত ১২ বছরে ইপিআই কভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে না ওঠায় ১৬ শতাংশ শিশু টিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ও ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ শূন্য। বরাদ্দকৃত জনবলও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি ২০১৯ ও ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান ২০২৪ অনুসারে, প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ছয়জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন। যদিও তা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া পঞ্চম স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টির সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) এখনো অনুমোদন পায়নি। ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহন ও বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু অ্যান্টিজেন (পিসিভি, ওপিভি ও এমআর) টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। সারা দেশে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে টিকা পরিবহনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। গবেষণার পরামর্শে বলা হয়, শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, জনসংখ্যাভিত্তিক জনবলনীতি বাস্তবায়ন করা, প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা বণ্টন, প্রতি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং টিকা সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে হবে।